অনুসন্ধানী প্রতিবেদক:
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মাইনুল হাসানের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির ভয়াবহ অভিযোগ থাকলেও এখনও তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। মাইনুলের বিরুদ্ধে নিয়োগ ও পোস্টিং বাণিজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচার, বাড়ি কেনা, সন্তানদের আমেরিকায় পড়াশোনা করানোসহ রাষ্ট্রদ্রোহের মতো অভিযোগ রয়েছে। নিজেরলোক পদায়নে সৈয়দ মাইনুলের ফিরিস্তি অনেক বড়।
অনুসন্ধানে জানাযায়, তার বিরুদ্ধে ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী পদে সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের পিএস অশোক বাবুর ভাগ্নী জামাই রিতেশবড়ুয়াকে নিয়োগ দেয়া, শেখ পরিবারের সদস্য লিটন চৌধুরীর ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত আব্দুল হামিদকে নরসিংদীর নির্বাহীপ্রকৌশলী পদে নিয়োগ দেয়া, মুন্সিগঞ্জের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিন রেজাকে ৫ আগষ্টের পর মাস্টার্স করতে দক্ষিণকোরিয়াতে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তবুও ফ্যাসিবাদের দোসরা এখনো পরিচালনা করছেন সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানপ্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন প্রকৌশলী সৈয়দ মাইনুল হাসান। তবে এতো অভিযোগের পরও তার সম্পদ ও ব্যাংকেরহিসাব জব্দের কোনো নির্দেশনা দেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার।
শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের দোসর হয়েও স্বপদে বহাল রয়েছেন। সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত এই সৈয়দ মাইনুল হাসান বুয়েটে ছিলেন ছাত্রলীগেরনেতা।
এছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সদস্য এবং আইইবি –২২ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের প্যানেলেনির্বাচন করে বিনা ভোটে সেন্ট্রাল কাউন্সিল মেম্বার নির্বাচিত হয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় সে বছরই আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সৈয়দ মাইনুল হাসান ১৯৯৬ সালে ১৮তম বিসিএসেনিয়োগ পান। এরপর ২৫ জানুয়ারী ১৯৯৯ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে তিনি যোগ দানকরেন।
বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে তদন্তও করছে। নিয়োগ ও পোস্টিং বাণিজ্য করেও তিনি বিপুলঅর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন।
জুলাই আন্দোলনে হাজারো ছাত্র জনতাকে হত্যায় সৈয়দ মাইনুল হাসান ছাত্রলীগ যুবলীগকে অনেক অর্থ বিনিয়োগ করেছেনবলেও অভিযোগ রয়েছে। স্বৈরাচার হাসিনার ঘনিষ্ট দোসর গণহত্যার মামলায় কারাগারে আটক সালমান এফ রহমানের সাথেঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে এবং ছিলো সৈয়দ মাইনুল হাসানের। আওয়ামী লীগের একটি বলয় তৈরি এবং বিপ্লবী সরকারেরবিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সৈয়দ মাইনুলের স্ত্রী ফেরদৌসি শাহরিয়ারও বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের সদস্য। তিনি ডেপুটি চিফ অফ মিশন হিসেবেযুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাস ওয়াশিংটন ডিসিতে কর্মরত ছিলেন।
সওজের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মাইনুল হাসানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থপাচার, বাড়ি কেনা, সন্তানদের আমেরিকায় পড়াশোনাকরানোসহ রাষ্ট্রদ্রোহের সব অভিযোগের তদন্ত এবং তদন্তের আগে তিনি যেনো যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যেতে না পারেন সেই ব্যবস্থাকরতে জোর দাবি জানিয়েছেন জুলাই আন্দোলনের ছাত্র জনতার প্রতিনিধিরা।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজে সর্বনিম্ন ২৯ হাজার ২৩০ কোটি থেকেসর্বোচ্চ ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে ৯ অক্টোবর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালবাংলাদেশ টিআইবি।
এছাড়া সওজের উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজে সার্বিক দুর্নীতির হার ২৩–৪০ শতাংশ বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।