যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে, যা ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর জন্য রুশ বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু বানানো আরও কঠিন করে তুলতে পারে।
সোমবার ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সম্পর্কের গুরুতর অবনতি ঘটেছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সহায়তা ইউক্রেনের জন্য রুশ সামরিক লক্ষ্য শনাক্তকরণ ও হামলা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছিল।
পরিস্থিতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে ওয়াশিংটন কিয়েভের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় বন্ধ করে দিয়েছে। সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ ফক্স বিজনেসকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানতে চেয়েছিলেন, জেলেনস্কি কি সত্যিই শান্তি প্রক্রিয়ায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ? তাই তিনি বললেন, চলুন কিছুদিন অপেক্ষা করি।’
তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে এই সহায়তা পুনরায় চালু হতে পারে। র্যাটক্লিফ আরও বলেন, ‘আমি চাই কিছুটা সময় নেওয়া হোক। এরপর আমরা জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া দেখেছি। সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে, তবে এটি সম্ভবত আবার চালু হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদেরও ইউক্রেনের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করতে নিষেধ করেছে। তবে দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইউক্রেনের অভ্যন্তরে তথ্য সংগ্রহের সক্ষমতা রয়েছে এমন কয়েকটি পক্ষ হয়তো কিয়েভকে প্রাসঙ্গিক গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করতে পারে। তবে এতে তাৎক্ষণিক ও গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য—যেমন রুশ বাহিনীর চলমান গতিবিধি লক্ষ্য করে নিখুঁত হামলার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য—অন্তর্ভুক্ত নাও থাকতে পারে।
ওভাল অফিসে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর ওয়াশিংটন ও কিয়েভের সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যায়। যদিও সাম্প্রতিক কিছু ইঙ্গিত সম্পর্ক উন্নতির আভাস দিয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) জেলেনস্কি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘টেলিভিশনের সামনে ওই বৈঠক ছিল দুর্ভাগ্যজনক। ইউক্রেন দ্রুত আলোচনার টেবিলে বসতে প্রস্তুত।’
সেদিনই এক চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন যে, ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার অধিকার যুক্তরাষ্ট্রকে প্রদান করে এমন একটি চুক্তিতে তিনি যেকোনো সময় স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত।
মঙ্গলবার রাতে কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জেলেনস্কির বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাই।’ অথচ এর আগে তিনি জেলেনস্কিকে ‘একজন স্বৈরশাসক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজও ইঙ্গিত দেন যে, ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা পুনরায় শুরু হতে পারে।
তিনি ফক্স নিউজকে বলেন, ‘যদি আমরা আলোচনার এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি এবং আত্মবিশ্বাস তৈরির কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি, তাহলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার নিয়ে পুনর্বিবেচনা করবেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সহায়তার প্রকৃত মাত্রা গোপন রাখা হলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ইউক্রেনকে শত্রুপক্ষের চলাচল সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য পেতে সাহায্য করছিল।
ইউক্রেনীয় সামরিক বিশ্লেষক মিখাইলো সামুস বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে বাহিনীগুলোর গতিবিধি বোঝার জন্য মার্কিন স্যাটেলাইট প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
এছাড়া, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার আগাম সতর্কবার্তা প্রদানেও মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ইউক্রেনীয় বিশ্লেষক পাভলো নারোজনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের তথ্য দেয়, সে বিষয়ে ইউক্রেন কখনো স্পষ্ট কিছু বলেনি। তবে অনুমান করা যায়—প্রতি মুহূর্তে আকাশে ‘রিপার ড্রোন’ ও মার্কিন বিমান টহল দেয় এবং প্রতিবার রুশ মিগ-৩১ উড্ডয়নের সঙ্গে সঙ্গেই ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলার সতর্কতা জানানো হয়।’
তবে রুশ অধিকৃত অঞ্চলে নিখুঁত হামলা পরিচালনায় মার্কিন গোয়েন্দা সহায়তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে।
নারোজনি বলেন, ‘কারখানা বা তেল শোধনাগারের মতো স্থির লক্ষ্যবস্তুতে আমরা নিজেরাই হামলা চালাতে পারি। কিন্তু আমরা যেভাবে রুশ কমান্ড সেন্টার ধ্বংস করছি বা তাদের জেনারেলদের টার্গেট করছি, তা সম্ভবত মার্কিন গোয়েন্দা সহায়তার মাধ্যমেই সম্ভব হচ্ছে।’