বেলায়েত হোসেন শামীমঃ
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে মৌসুমী ফল লিচুর বাম্পার ফলন ও বাজার মূল্য ভাল পাওয়ায় চাষীদের মুখে হাসি। গাছের ডালে ডালে থোকায় থোকায় জুলছে লাল লাল লিচু। লিচুর ভারে নুয়ে পড়েছে বেশিরভাগ গাছ ও গাছের ডাল। চারদিকে লিচুর মিষ্টি মধুর ঘ্রান, গাছের ডালে ডালে ভিড় করছে মৌমাছি।
গাজীপুরের কাপাসিয়া অঞ্চলের আবহাওয়া লিচুর জন্য বেশ উপযোগি হওয়ায় এখানে প্রচুর পরিমাণে লিচুর বাগান গড়ে উঠেছে। কাপাসিয়া উপজেলার দূর্গাপুর, রাণীগঞ্জ, নাশেরা, নাজাই, রাওনাট, চাঁপাত, চাঁদপুর, ভাকোয়াদী, আমরাইদ, টোক, সিংহশ্রী, খিরাটী সহ বিভিন্ন গ্রামে পর্যাপ্ত পরিমাণে লিচু উৎপাদিত হয়। তন্মধ্যে রানীগঞ্জ, নাশেরা, নাজাই ও বাড়ৈগাঁও এলাকা লিচুর জন্য বিখ্যাত। কাপাসিয়া তথা গাজীপুর জেলার বাহিরে রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় রানীগঞ্জের সুস্বাধু লিচুর একটি বিশেষ পরিচিতি রয়েছে।
রানীগঞ্জের নাশেরা, বাড়ৈগাঁও অঞ্চলের আবহাওয়া লিচু উৎপাদনের জন্য বেশ উপযোগি হওয়ায় এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে লিচুর বাগান গড়ে উঠেছে যা কাপাসিয়ার আর কোথাও এত পরিমাণে নেই। এখানকার লিচু রসালো ও স্বাধ বেশি হওয়ায় এর সুনাম রয়েছে সারাদেশ জুড়ে। লিচু চাষ করে কাপাসিয়া উপজেলার প্রান্তিক চাষীদের অনেকেই স্বাবলম্বি হয়ে উঠেছে। এতে অনেকের নতুন করে লিচু চাষের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে।
বর্তমানে উপজেলার বিভিন্নস্থানে সৃৃজিত লিচু বাগানে গেলেই থোকায় থোকায় লিচু নজরে আসে। মিষ্টি ও রসালো স্বাধের বিভিন্ন লিচুর সমাহার রয়েছে এসব বাগানগুলিতে।
এ এলাকার বাগানে বুম্বাই, কালীপুরি, চায়না থ্রি এবং দেশী লিচুর সমারহে ছেয়ে গেছে বাগানগুলো। লিচু বাগানের দিকে তাকালে সবুজ পাতার সাথে লাল থোকায় থোকায় লিচু দেখে মন ভরে যায়। গতকাল রবিবার উপজেলার রানীগঞ্জ, নাজাই, বাড়ৈগাঁও, নাশেরা, দূর্গাপুর এলাকার বিভিন্ন লিচু বাগানে গিয়ে দেখা গেছে বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করে লিচু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাতে প্রস্তুত করছে চাষীরা। প্রতিদিন এই এলাকা থেকে ৪/৫টি ট্রাক বোঝাই লিচু রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্নস্থানে যাচ্ছে বলে জানায় চাষীরা।
বেশিরভাগ গাছের লিচুই মোটামুটি পরিপক্ষ হয়েছে। তবে এখনো কিছু কিছু বাগানে গাছের লিচু কাঁচা রয়ে গেছে। বাগান মালিক ও চাষীরা আশা করছেন অল্প সময়ের মধ্যে অবশিষ্ট লিচুগুলো পরিপক্ক হয়ে লাল রং ধারণ করবে। রাণীগঞ্জের লিচু বাগানের মালিক হেলাল, বেলায়েত, মালেক সহ বিভিন্ন বাগান মালিক ও চাষীরা জানান, দীর্ঘ ২৫/৩০ বছর ধরে লিচু সহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের চাষ করে ভালই চলছে তাদের সংসার। চলতি মৌসুমে তাদের বাগানের লিচুর ব্যাপক ফলন হওয়ায় এবং বাজার মূল্য ভালো পাওয়ায় ভিষন খুষি তারা।
স্থানীয় বাজারে খুচরা প্রতি ১০০টি বুম্বাই, কালিপুরি লিচুর খুচরা বিক্রয় মূল্য ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, চায়না থ্রি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং দেশি লিচুর মূল্য ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় বাজারে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার কারণে চাষীরা লিচু বিক্রি নিয়ে বিড়ম্বনায় পোহাতে হচ্ছে না।
চলতি বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় অনেক লিচু গাছেই নষ্ট হয়ে যায় এবং অনাবৃষ্টি ও খড়ায় লিচুর আকার খুব বেশি একটা বয় হয়নি বলে জানান চাষীরা। কৃষকদের যদি লিচু চাষের জন্য সরকারিভাবে উন্নতমানের কৃষি সরঞ্জামাদি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় তবে কৃষকরা অনেক উপকৃত হবে বলেন জানান লিচু চাষীদের অনেকেই । রানীগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকার চাষীরা লিচু সহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের চাষ করে এই অঞ্চলে। এরমধ্যে লিচু, কাঁঠাল, আনারস ও পেঁয়ারা হচ্ছে কাপাসিয়ার প্রসিদ্ধ মৌসুমি ফল। এ সমস্ত ফল কাপাসিয়ার চাহিদা মিটিয়ে দেশ ও দেশের বাহিরে রপ্তানি করা হয়। ফলে মৌসুমি ফলের চাষাবাদ করে সাবলম্বী হচ্ছেন এই এলাকার অনেক চাষী ও সাধারণ কৃষকেরা।
এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বসাক জানান, কাপাসিয়ার কৃষকেরা অনেক পরিশ্রমি। ভাল ফলন পাওয়ার জন্য তারা অনেক বেশি চেষ্টা ও পরিশ্রম করে। আমিও সব সময় চেষ্টা করি তাদের কৃষি কাজে ভাল ফলনের জন্য পরামর্শ ও সরকারি সাহায্য সহযোগিতা দেয়ার জন্য । সম্প্রতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে বিভিন্ন চাষীদের মৌসুমী ফল চাষে উদ্ভুদ্ধ করতে ও চাষীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন মৌসুমী ফল চাষের নানাবিধ নিয়ম কানুন সম্পর্কে সচেতন করতে।
মৌসুমী ফল লিচু, আম, কাঁঠাল, আনারস ও পেঁয়ারা সহ বিভিন্ন ফলের সমারোহে প্রতিদিন সকালে জমে উঠে উপজেলার রানীগঞ্জ, চাঁদপুর, কাপাসিয়া, আমরাইদ ও টোক বাজার। এসব বাজারে দূর দূরান্ত থেকে ক্রেতারা ট্রাকে করে এ এলাকার মৌসুমি ফল নিয়ে চলে যান রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রির উদ্দেশ্যে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান গত ২৩-২৪ অর্থ বছরে কাপাসিয়ায় ৩২৭ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ১ শ ২৮ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদিত হয়েছে। এবার ২৪-২৫ অর্থ বছরে গত ২৩-২৪ অর্থ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদী।