পরে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার (২২ জানুয়ারি) ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন। বাংলাদেশের শত শত বিলিয়ন চুরি যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে বিদেশি বন্ধুদের সমর্থন চেয়েছেন তিনি।
পরে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সচিব লামিয়া মোর্শেদ এবং জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক আরিফুল ইসলাম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
লুৎফে সিদ্দিকী জার্মান মন্ত্রী উলফগ্যাং শ্মিটকে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সরকারের প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, সরকার এই বিষয়ে একটি সম্পদ পুনরুদ্ধার কমিটি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে।
তিনি বলেন, সরকার প্রাথমিকভাবে শীর্ষ ২০ জন অর্থ পাচারকারীকে তাদের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে চিহ্নিত করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়ে জার্মান সমর্থন চেয়েছেন এবং জার্মান মন্ত্রীর সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলি নিয়েও আলোচনা করেছেন।
জার্মান মন্ত্রী বলেন, এপ্রিল মাসে একটি নতুন জার্মান ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ নেপালের জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনা অন্বেষণের জন্য ভারত, নেপাল এবং ভুটানকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি অর্থনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চায়
প্রধান উপদেষ্টা সুইস ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিসের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং জলবায়ু অর্থায়নসহ পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
তিনি সুইজারল্যান্ডকে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে কার্বন রোধ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
তিনি সুইজারল্যান্ডকে বাংলাদেশের যুবসমাজের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
জার্মান মন্ত্রী এবং সুইস কাউন্সিলরের সঙ্গে তার সাক্ষাতে তিনি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা করেন।
বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ এবং কঙ্গোর রাষ্ট্রপতি ফেলিক্স শিসেকেদির সঙ্গে তার সাক্ষাতের সময় প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয় যে, বেলজিয়ামের একজন রাজপুত্রের নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠীর চালু করা একটি ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি কীভাবে আফ্রিকান দেশটিতে গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন সংরক্ষণের আকার সম্প্রসারণে সহায়তা করেছে।
কঙ্গোর সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলে ক্ষুদ্রঋণ প্রচলনকারী প্রিন্স ইমানুয়েল ডি মেরোড বলেন, ক্ষুদ্রঋণ সেখানে ২১ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পর কঙ্গোর বন এখন ব্রিটেনের আকারের দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এদের মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশ প্রাক্তন যোদ্ধা।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি এই অঞ্চলের কিছু অংশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিনাওয়াত্রার সাথে রোহিঙ্গা সংকট এবং জাহাজ চলাচলসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলি নিয়েও আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধান করতে চাই। কারণ আরো বেশিসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে।’
বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীদের একজন সিনাওয়াত্রা বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের পর দুই দেশের মধ্যে যুব সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে তার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, থাই প্রধানমন্ত্রীর পিতা থাকসিন সিনাওয়াত্রা ক্ষুদ্রঋণ এবং সামাজিক ব্যবসার একজন বড় ভক্ত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা থাই প্রধানমন্ত্রীকে ‘থ্রি জিরো’ ধারণা সম্পর্কে অবহিত করেন, যার লক্ষ্য দারিদ্র্য, সম্পদের ঘনত্ব, বেকারত্ব এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে একটি আত্ম-ধ্বংসী সভ্যতাকে উদ্ধার করা।
অধ্যাপক ইউনূস সিনাওয়াত্রাকে বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ৫৮টি দেশে প্রায় ৫০০০ ‘থ্রি জিরো’ ক্লাব রয়েছে।
থাই প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন এই বছরের এপ্রিলে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি সংগঠনের পরিকল্পিত শীর্ষ সম্মেলনের সময় বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশকে আসিয়ানের একটি সেক্টরাল সংলাপ অংশীদার হতে এবং ফলস্বরূপ সংস্থার পূর্ণ সদস্য হতে থাইল্যান্ডের সমর্থন কামনা করেন। সূত্র : বাসস