বাংলাদেশে ১ লাখের বেশি শিশুর মৃত্যু হয় পাঁচ বছর বয়সের আগেই। এসব মৃত্যুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই হয়েছে শিশুর বয়স ২৮ দিন হওয়ার মধ্যেই। মৃত শিশু প্রসবের ওপর তৈরি করা দ্বিতীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বছরে ৬৩ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হয় প্রসবকালীন সময়। অর্থাৎ প্রতি ৪১টি শিশু জন্মের ক্ষেত্রে একটি শিশুর মৃত্যু ঘটছে। মৃত সন্তান প্রসবের এই হার দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। গতকাল বৃহস্পতিবার ইউনাইটেড নেশনস ইন্টার-এজেন্সি গ্রুপ ফর চাইল্ড মরটালিটি এস্টিমেশনের (ইউএনআইজিএমই) প্রকাশিত নতুন দুটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মা ও নবজাতকের যত্নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। ১৯৯০ সাল থেকে এক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধিত হলেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মৃত সন্তান প্রসবের সর্বোচ্চ হার রেকর্ড করে চলেছে। প্রতিরোধযোগ্য জটিলতা যেমন অপরিণত জন্ম, সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা সেপসিস ও নিউমোনিয়ার মতো সংক্রমণের জটিলতায় বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখেরও বেশি নবজাতকের মৃত্যু হয়, যা তাদের বেঁচে থাকা ও বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সম্পর্কিত লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রতি বছর অতিরিক্ত ২৮ হাজার নবজাতককে বাঁচাতে হবে, যা মাতৃ ও নবজাতকের উন্নত যত্নের জরুরি প্রয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের ওআইসি রিপ্রেজেন্টেটিভ ফারুক আদ্রিয়ান দুমুন বলেছেন ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে আমরা লাখ লাখ শিশু ও মাকে বাঁচাতে পারি। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিতে আরও বিনিয়োগ করি এবং সব পর্যায়ে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের, বিশেষ করে ধাত্রী মায়েদের সংখ্যা বাড়াতে পারি, তাদের সঠিক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারি, যাতে প্রতিটি নবজাতক যেন একটি নিরাপদ হাতে জন্মগ্রহণ করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে ইউনিসেফ মাতৃ ও শিশুর মৃত্যু রোধে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নবজাতকের মৃত্যু ও মৃত সন্তান প্রসবের উচ্চ হারের পেছনে অন্যতম কারণ হলো এখনো দেশের ৩০ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় ঘরেই। আকারে ছোট ও অসুস্থ নবজাতকের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকা এবং দক্ষ ধাত্রীর ঘাটতি। এ ছাড়া মা ও নবজাতকের অন্যান্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উপজেলা পর্যায়ে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা মানসম্পন্ন সেবার অভাব, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পর্যায়ে প্রসবের পর অপর্যাপ্ত সেবা এবং অনিয়ন্ত্রিত বেসরকারি খাত, যার ফলে এসফেকশিয়া (জন্মকালীন শ্বাসরুদ্ধতা), অপরিণত বয়স এবং সংক্রমণজনিত প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু ঘটে। এসব কারণে অপরিণত শিশুর জন্ম ও সংক্রমণের মতো প্রতিরোধযোগ্য জটিলতাতেও শিশুমৃত্যু ঘটছে।
একই সঙ্গে, মানসম্মত গর্ভকালীন ও সন্তান প্রসবকালীন সেবার ঘাটতি এবং গর্ভধারণকালে অন্যান্য অসুস্থতাজনিত পরিস্থিতিতে যথাযথভাবে প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা করতে না পারার কারণে বাংলাদেশে উচ্চ হারে মৃত শিশুর জন্ম হচ্ছে, যা এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অন্তরায়। তহবিল ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সম্পদের ঘাটতি এসব সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে এবং তা শিশুমৃত্যু কমিয়ে আনার অগ্রগতিকে ম্লান করে দিচ্ছে।
২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলো অর্জনে আর মাত্র পাঁচ বছর বাকি আছে। তাই মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা উন্নতর করতে আমাদের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। ইউনিসেফের সঙ্গে সমন্বিতভাবে ডব্লিউএইচও প্রতিরোধযোগ্য শিশুমৃত্যু ও মৃত শিশুর জন্মের অবসানের লক্ষ্যে অবিলম্বে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিনিধি ডা. আহমেদ জামশিদ মোহামেদ। তিনি বলেন, সরকারের জোরালো অঙ্গীকার, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় টেকসই বিনিয়োগ এবং বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও সর্বোত্তম চর্চা অনুসরণের মাধ্যমে আমরা এই বেদনাদায়ক ক্ষতি প্রতিরোধ এবং প্রতিটি শিশুর জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি।
এ ছাড়া ইউনিসেফ ও ডব্লিউএইচও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ সেবাদাতার উপস্থিতিতে সন্তান প্রসবের ঘটনা বৃদ্ধি, নবজাতকের সেবা ইউনিটগুলোর সম্প্রসারণ, প্রশিক্ষিত নার্সের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং গর্ভকালীন, সন্তান প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর সেবার মান উন্নত করার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে মাতৃ স্বাস্থ্য ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা জোরদারে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা কর্মী বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহের আহ্বান জানানো হয়েছে।
Chief Editor: Saidur Rahman Rimon
Acting Editor: Neamul Hassan Neaz
Office: +8809611584881, 01320950171
E-mail: newsnbb365@gmail.com
Copyright © 2025 NBB. All rights reserved.