• শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
রাজশাহীত টিসিবির পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ভোক্তারা কিশোরগঞ্জে ফাজিল মাদ্রাসায় ভুয়া কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ সাভারে ৯৪ বোতল ফেনসিডিল সহ দুই মাদক কারবারি গ্রেফতার মিরপুর সাংবাদিক কল্যাণ সমবায় সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি জহিরুল ইসলাম-সম্পাদক মারুক হায়দার দেশজুড়ে অবৈধ আবাসন প্রকল্পের ছড়াছড়ি বিতর্কিত ঢাকা বোট ক্লাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্ছেদ অভিযান সাংবাদিককে হুমকি, অফিসে দাপট ; দুলালের খুঁটির জোর কোথায়? সাভারে ৪০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার কিশোরগঞ্জে খাস সম্পত্তির উপর দিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধের অভিযোগ! ছাত্র-জনতার ওপর গুলির নির্দেশদাতা ৩৯ ম্যাজিস্ট্রেট বহাল তবিয়তে

পিরোজপুরে অস্তিত্বহীন সড়ক, কালভার্ট ও সেতু মহারাজ পরিবারের পেটে

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update : বুধবার, ৭ মে, ২০২৫

সড়ক, কালভার্ট ও সেতুর কাজ না করেই পিরোজপুরের মহারাজ পরিবার পকেটে ভরেছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) আটটি প্রকল্পের ৯১২ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই পরিবারের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে উন্নয়নকাজগুলোর বাস্তবায়ন দেখানো হয়। বাস্তবে দুদক এসব কাজের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। একই অভিযোগ থাকা আরও ৯টি প্রকল্পের উন্নয়নকাজের তদন্ত চলছে, যার টাকার পরিমাণ দেড় হাজার কোটি টাকা।

পিরোজপুরের সাবেক এমপি মো. মহিউদ্দীন মহারাজের পরিবার আওয়ামী লীগের শেষ ১০ বছরে মহাদাপটে নিয়ন্ত্রণ করেছে জেলার রাজনীতি ও প্রশাসন। পরিবারটির অঢেল টাকার কাছে সবাই ছিল অসহায়। টাকার উৎস নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও দালিলিক কোনো প্রমাণ ছিল না। এখন দুদকের তদন্তে তাদের টাকার উৎস বের হতে শুরু করেছে।

জানা গেছে, সড়ক, কালভার্ট ও আয়রন সেতু নির্মাণে ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৭২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ৩৮৩টি স্কিমে কাগজপত্রে প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেখিয়ে পুরো টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ ঘটনায় দুদকের আটটি মামলায় মহারাজ ও তাঁর পরিবারের চারজনসহ ২৭ জনকে আসামি করা হয়। সহযোগিতা করায় পিরোজপুরের এলজিইডি ও হিসাবরক্ষণ বিভাগের আসামি হয়েছেন ২২ জন। গত ১৫ এপ্রিল মামলার পর এলজিইডির হিসাবরক্ষক, জেলা হিসাবরক্ষক কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এখন তারা পিরোজপুর কারাগারে।

মামলার বিবরণীর তথ্যমতে, পিরোজপুর জেলা পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরসহ গত বছরের জুলাই পর্যন্ত বরাদ্দ হয়েছিল ৯০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ৩১টি ভুয়া স্কিমের মাধ্যমে ৭৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

পিরোজপুরে অস্তিত্বহীন সড়ক, কালভার্ট ও সেতু

মহারাজ পরিবারের পকেটে আড়াই হাজার কোটি টাকা

মহারাজ পরিবারের পকেটে আড়াই হাজার কোটি টাকাকাগজপত্রে পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা ইউনিয়নের পোরগোলা হাই স্কুল থেকে বাগমারার এই স্থানে রয়েছে ৯৬ মিটার দৈর্ঘ্যের গার্ডার সেতু। বাস্তবে সোমবার সেখানে পাওয়া গেল সাঁকো (ইনসেটে) মহিউদ্দীন মহারাজ -সমকাল

 সুমন চৌধুরী, বরিশাল ও ফসিউল ইসলাম বাচ্চু, পিরোজপুর

 প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫ | ০১:১৩ | আপডেট: ০৭ মে ২০২৫ | ০৯:৫২

সড়ক, কালভার্ট ও সেতুর কাজ না করেই পিরোজপুরের মহারাজ পরিবার পকেটে ভরেছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) আটটি প্রকল্পের ৯১২ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই পরিবারের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে উন্নয়নকাজগুলোর বাস্তবায়ন দেখানো হয়। বাস্তবে দুদক এসব কাজের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। একই অভিযোগ থাকা আরও ৯টি প্রকল্পের উন্নয়নকাজের তদন্ত চলছে, যার টাকার পরিমাণ দেড় হাজার কোটি টাকা।

পিরোজপুরের সাবেক এমপি মো. মহিউদ্দীন মহারাজের পরিবার আওয়ামী লীগের শেষ ১০ বছরে মহাদাপটে নিয়ন্ত্রণ করেছে জেলার রাজনীতি ও প্রশাসন। পরিবারটির অঢেল টাকার কাছে সবাই ছিল অসহায়। টাকার উৎস নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও দালিলিক কোনো প্রমাণ ছিল না। এখন দুদকের তদন্তে তাদের টাকার উৎস বের হতে শুরু করেছে।

জানা গেছে, সড়ক, কালভার্ট ও আয়রন সেতু নির্মাণে ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৭২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ৩৮৩টি স্কিমে কাগজপত্রে প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেখিয়ে পুরো টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ ঘটনায় দুদকের আটটি মামলায় মহারাজ ও তাঁর পরিবারের চারজনসহ ২৭ জনকে আসামি করা হয়। সহযোগিতা করায় পিরোজপুরের এলজিইডি ও হিসাবরক্ষণ বিভাগের আসামি হয়েছেন ২২ জন। গত ১৫ এপ্রিল মামলার পর এলজিইডির হিসাবরক্ষক, জেলা হিসাবরক্ষক কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এখন তারা পিরোজপুর কারাগারে।

মামলার বিবরণীর তথ্যমতে, পিরোজপুর জেলা পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরসহ গত বছরের জুলাই পর্যন্ত বরাদ্দ হয়েছিল ৯০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ৩১টি ভুয়া স্কিমের মাধ্যমে ৭৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনর্বাসন প্রকল্প প্রথম সংশোধিতের আওতায় ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় ১২৫টি, সদর উপজেলায় দুটি ও নেছারাবাদে একটি ভুয়া স্কিমে আত্মসাৎ করা হয় ২৩৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর জেলা-প্রথম সংশোধিতের আওতায় ৩১টি ভুয়া স্কিমে আত্মসাৎ করা হয় প্রায় ৬০ কোটি ৮ লাখ টাকা। পল্লী সড়ক ও কালভার্ট মেরামত কর্মসূচি প্রকল্পে তিনটি ভুয়া স্কিমে ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন শীর্ষক প্রকল্পে (প্রথম সংশোধনী) শুধু ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় ৬৪টি ভুয়া স্কিমে আত্মসাৎ করা হয়েছে ১৭৫ কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ এবং শক্তিশালীকরণ প্রকল্পে পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১১৮টি ভুয়া স্কিমে আত্মসাৎ করা হয় ৩৪৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩-এ আত্মসাৎ করা হয়েছে প্রায় ৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

পিরোজপুরের কাউখালী ও ইন্দুরকানী উপজেলায় শহর মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও মৌলিক অবকাঠামো প্রকল্পের দুটি স্কিমে ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা ইউনিয়নের পোরগোলা হাই স্কুল থেকে বাগমারা আবাসন সড়কে ৯৬ মিটার দৈর্ঘ্যের গার্ডার সেতু নির্মাণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯ কোটি ২৮ লাখ টাকার দরপত্র হয়েছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল মহারাজের ভাই মিরাজের ইফতি ইউটিসিএল লিমিটেড। দুদকের মামলার তথ্য অনুযায়ী কাজ না করে বরাদ্দকৃত অর্থের ৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা তুলে নেন মিরাজ।

সোমবার সরেজমিন দেখা গেছে, সেতুর নির্ধারিত স্থানে বাঁশ ও সুপারি গাছ দিয়ে তৈরি একটি বিশাল সাঁকো রয়েছে। পাঁচ গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে তা দিয়ে যাতায়াত করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন বলেন, সেতুর কাজের জন্য মাটি পরীক্ষা করতে কয়েকবার ইঞ্জিনিয়াররা এসেছিলেন। এখনও কাজ শুরু হয়নি।

নাজিরপুর উপজেলা সদর থেকে বৈঠাকাটা পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৯ কিলোমিটার সড়কে কাজ না করেই বরাদ্দকৃত ৪০ কোটি ৩ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এটিরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইফতি ইউটিসিএল লিমিটেড।

সাত লাইসেন্সে লোপাট
মহিউদ্দিন মহারাজ, তাঁর তিন ভাই মিরাজুল ইসলাম মিরাজ, মো. সামসুদ্দিন ও মো. সালাউদ্দিন এবং মিরাজের স্ত্রী শামিমা আক্তারের মালিকানাধীন সাতটি ঠিকাদারি লাইসেন্সে ভুয়া উন্নয়নকাজগুলো কাগজপত্রে বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে।

আট মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন– পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক এমপি মহিউদ্দিন মহারাজ, তাঁর তিন ভাই ভাণ্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ, তেলিখালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. সামসুদ্দিন ও ঠিকাদার মো. সালাউদ্দিন, মিরাজের স্ত্রী শামিমা আক্তার, পিরোজপুর এলজিইডির তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার হাওলাদার, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান, গ্রেপ্তার হওয়া এলজিইডির হিসাবরক্ষক এ কে এম মোজাম্মেল হক খান, জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মোহসিন, অবসরপ্রাপ্ত জেলা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন, হিসাবরক্ষণ অফিসের এসএএস সুপার নজরুল ইসলাম ও মাসুম হাওলাদার; ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্পের পরিচালক রফিকুল হাসান প্রমুখ।

মামলার বিষয়ে বাদী পিরোজপুর দুদকের উপপরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, প্রকল্পগুলোর বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঠিকাদারি কাজের পরিমাপ বই, কার্যাদেশ প্রদানের চিঠিসহ সঠিক কোনো কাগজপত্র এলজিইডি ও হিসাবরক্ষণ অফিসে নেই। ইচ্ছামতো স্কিমের নাম দিয়ে বিল ভাউচার করে এলজিইডি ও হিসাবরক্ষণ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

অপেক্ষমাণ আরও ৯ মামলা
এলজিইডির আরও ৯টি প্রকল্পে কাজ না করেই দেড় হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। এ অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। অভিযোগের সত্যতা মিললে আরও ৯টি মামলা হবে বলে জানান দুদকের উপপরিচালক। তিনি বলেন, ১৭টি প্রকল্পের ভুয়া বাস্তবায়ন দেখিয়ে আড়াই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন ৫ আগস্ট পর্যন্ত মহারাজকে ভাণ্ডারিয়ায় দেখা গেলেও এর পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মূখপত্র।। NBB

Acting Editor: Neamul Hassan Neaz

Mofussal Editor: Kamrul Hasan Rony

Office: +8809611584881, 01320950171

E-mail: newsnbb365@gmail.com

Translate »