• শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০১:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম

ফিটনেসহীন গাড়িতে সয়লাব রাজধানী

সম্পাদকীয়
Update : মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

 

হাই কোর্টের কঠোর নিষেধাজ্ঞা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ি, বিআরটিএর ঘন ঘন অভিযান সত্ত্বেও ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচল কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। বরং দিন দিনই আনফিট গাড়িতে সয়লাব হয়ে পড়ছে গোটা রাজধানী। পরিত্যক্তপ্রায় ইঞ্জিনে ভয়ানক শব্দ তুলে, অনর্গল নিকষ কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে ছুটে চলে গাড়িগুলো। বেশির ভাগ গণপরিবহনের দরজা-জানালা ভাঙা, স্থানে স্থানে ছোট-বড় ফোকলা। বাসের বডির অংশ খুলে পড়েছে। কোনোটার সামনের বিরাট অংশই ভাঙা। পেছনের বাম্পার খুলে ঝুলে আছে। জানালা বলতে কিছু নেই। ভিতরে বসার সিটগুলো নড়বড়ে। জোড়াতালি দিতে দিতে সিট-কভারের ওপর দুর্ভিক্ষের ছাপ পড়ে গেছে।

রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ে লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন। কোনোটির রং চটা, কোনোটির ছাল ওঠা। শতেক ছিন্ন ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। কিছু বাসের বাইরের রং ঠিক থাকলেও ভিতরে করুণ অবস্থা। নগরীর অধিকাংশ রুটের বাস বাহ্যিক চেহারায় আনফিট হলেও বিআরটিএর কল্যাণে কাগজপত্রে ফিট সনদধারী। এসব নিয়েই ঝনঝন করে ছুটে চলা মুড়ির টিন মার্কা পরিবহনের যন্ত্রণা থেকে কোনোভাবেই রেহাই মিলছে না।

যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘব করার পাশাপাশি উন্নত সেবা দেওয়ার নামে বিভিন্ন সময় রাজধানীতে নানা কোম্পানির ব্যানারে যেসব রঙচঙা গাড়ি নামানো হয়েছে, সেগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। পরিবহন মালিক সমিতি, ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএর হিসাবমতে, রাজধানীর ৩৫৯টি রুটে বাস-মিনিবাস চলে প্রায় ১৬ হাজার। এর মধ্যে চার হাজার বাসের ফিটনেস সনদ হালনাগাদ আছে বলে দাবি করা হয়। বাস্তবে এগুলোরও অধিকাংশই সনদ পাওয়ার অযোগ্য। এ ছাড়া দুই সহস্রাধিক বাস-মিনিবাসের বয়স ৩০ বছর ছুঁই ছুঁই করছে। এ হিসাবে রাজধানীর রাজপথ দাপিয়ে বেড়ানো বেশির ভাগ বাস-মিনিবাসই ফিটনেসবিহীন। কিন্তু গাড়ির মালিক, রুট কমিটি, ট্রাফিক বিভাগ কারও যেন সেদিকে দেখার ফুরসত নেই। সবাই ছুটছেন টাকার ধান্দায়। ভাঙাচোরা, বিপজ্জনক যানবাহন চলাচল করতে দেওয়ার বিপরীতেও ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ মোটা অঙ্কের মাসোহারা হাতিয়ে নেয় বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

হর্ন, ওয়াইপার ও ফিটনেস ভালো না থাকলেও চরম ঝুঁকি নিয়ে ঢাকাতেই অন্তত ১২ হাজার বাস-মিনিবাসের সঙ্গে যোগ হয়েছে ফিটনেসবিহীন ট্রাক, লরি, সিএনজি, টেম্পো, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার। সব মিলিয়ে লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা কয়েক লাখ আনফিট গাড়ি রাজধানীজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সেগুলোতেই নিজেদের প্রাণ হাতে নিয়ে যাতায়াত করছেন মানুষজন। তবে বিআরটিএ জানিয়েছে, সারা দেশে ফিটনেসবিহীন এমন গাড়ি রয়েছে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩২০টি। ২৩ জুলাই হাই কোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে বিআরটিএর দাখিলকৃত প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএকে উদ্দেশ করে আদালত বলে, ‘আপনাদের নাকের ডগার ওপর দিয়ে কীভাবে লাখ লাখ ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলে? রাস্তায় কোনো ফিটনেসবিহীন গাড়ি থাকতে পারবে না।’

উচ্চ আদালতের এ কঠোর নির্দেশ সত্ত্বেও ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচল বন্ধ হয়নি। বিআরটিএসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বারবার অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি কঠোর আইনি পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েও অজ্ঞাত কারণে পিছিয়ে গেছে। অন্যদিকে গাড়ির মালিক, শ্রমিক ও পরিবহন নেতারা জানিয়েছেন, আনফিট গাড়ি রাস্তায় চালাতে ঘাটে ঘাটে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিতে হচ্ছে। লক্কড়-ঝক্কড় মার্কার চলাচলের অনুপযোগী একেকটি বাস-মিনিবাস বাবদ প্রতি মাসে বিআরটিএ চক্রকে তিন হাজার এবং ট্রাফিক বিভাগকে পাঁচ-সাত হাজার টাকা মাসোহারা দিতে হয়। এ ছাড়া বিশেষ অভিযান ও মোবাইল কোর্টের নামে পরিবহন নেতারা মাঝেমধ্যেই বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকেন।

ফিটনেসহীন গাড়ি বন্ধ হয় না যে কারণে : ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযানের উদ্যোগ নিয়েও তা অব্যাহত রাখা সম্ভব হয় না। ঢাকঢোল পিটিয়ে কয়েক দিন অভিযান চালিয়ে হাতেগোনা কিছু গাড়ি আটক করে এবং জরিমানার দ-াদেশ দিয়েই সবকিছু শেষ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী পরিবহন মালিক ও নেতাদের অবৈধ চাপ প্রয়োগ, স্বার্থবঞ্চিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির কর্মকর্তার নানা অজুহাত ও পরিকল্পিত যাত্রী ভোগান্তির বেহাল চিত্র তৈরির মাধ্যমেই অভিযান শিথিল করানো হয়।

এর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকনের উদ্যোগে ২০ বছরের পুরনো ফিটনেসবিহীন গাড়ি জব্দ, লাইসেন্সবিহীন চালকদের আইনের আওতায় আনাসহ ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স জব্দ করার বিশেষ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৪১ জন চালককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া ৪২০টি মামলা করা হয়। পাশাপাশি ৩১টি বাস ও লেগুনা জব্দ করে ডাম্পিং করা হয়। জরিমানা আদায় করা হয় ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৬৫০ টাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা জেলা প্রশাসন যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করে। এতে সহযোগিতা করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। কিন্তু নানামুখী চাপে অভিযানটি অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র জানায়, শহরের আয়তন ও জনসংখ্যা বিবেচনায় কত গাড়ি নামবে এর কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। এ বিষয়ে নেই কোনো সরকারি পরিকল্পনা বা নির্দেশনা। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ঢাকার সড়ক অনুপাতে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিকশা মিলিয়ে সর্বোচ্চ দুই লাখ গাড়ি চলাচলের উপযোগী। অথচ সেখানে গাড়ি চলাচল করছে ১০ লাখেরও বেশি। আনফিট গাড়ি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করা হলে রাজধানীসহ সারা দেশে যাত্রী চলাচল ও পণ্য পরিবহনে চরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। এ ক্ষেত্রে বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিআরটিএ সূত্র জানায়, প্রায় দুই বছর ধরে বিআরটিএ ত্রুটিযুক্ত কোনো গাড়িকে রুট পারমিট দেয়নি। ঢাকায় সহস্রাধিক বাস-মিনিবাসের ফিটনেসের মেয়াদ তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও ফিটনেস সার্টিফিকেট মিলছে না। বিআরটিএতে কম্পিউটারাইজড ফিটনেস ব্যবস্থাপনা চালুর পর থেকে চোরাগোপ্তা পথে ফিটনেস সার্টিফিকেট ম্যানেজ করার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তারা। কিন্তু তাতে কী! ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে সদর্পে চলাচল করছে বিপজ্জনক গাড়িগুলো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মূখপত্র।। NBB

Acting Editor: Neamul Hassan Neaz

Mofussal Editor: Kamrul Hasan Rony

Office: +8809611584881, 01320950171

E-mail: newsnbb365@gmail.com

Translate »