প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ২৩, ২০২৫, ৫:২৩ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ৫, ২০২৫, ১০:০১ এ.এম

আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, সাংবাদিক বন্ধু মোস্তফা কাজলকে মাত্র দুদিন আগেই হারালাম- সে চলে গেছে চিরতরে, বহুদূরে। এ রেশ কাটেনি একটুও - অথচ আজ কাজল নামে আমার অনেক ঘনিষ্ট আরেক বন্ধুকে চিরদিনের জন্যই হারাতে হলো।
রামপুরার উলোনে হাতিরঝিল ঘেঁষেই কাজল, অর্থাৎ এস এম সিদ্দিকী কাজলের বাড়ি। চাকরির সুবাদে ঢাকায় বসবাস শুরুর এক - দেড় বছরের মধ্যেই কাজল ও তার বন্ধু ব্যাচটির সঙ্গে আমার ঘনিষ্টতা গড়ে উঠে। একই আদলে, ভালোবাসার বন্ধনে, বন্ধুত্বের ২৮টি বছর পেরিয়ে চলছি। কোনো কারণে একটু মন খারাপ হলেই সোজা হাজির হতাম কাজলের বাড়িতে, গেট সংলগ্ন একান্ত আস্তানায়। কেউ আর সহসা খুঁজে পেতো না।
তাছাড়া সাংবাদিকতায় মাঝেমধ্যেই হুমকি ধমকি, ঝুঁকির মধ্যে পড়তাম - তাই কাজলের ওখানে পৌঁছাতেই সে মেইন গেটে নুরু, আলম, সাধীনদের ডেকে সার্বক্ষণিক পাহাড়ার ডিউটিতে রাখতো। ২৭/২৮ বছরের সেই অভ্যাস কাজল শেষদিন পর্যন্ত পালন করে গেছে। সিসি ক্যামেরায় রাস্তার নজরদারি, গেটে পাহাড়া বসানো, গলি মাথার দুই দোকানিকে বারবার সতর্ক রাখার বাড়াবাড়িতে প্রায়ই আমি ক্ষেপে যেতাম, বলতাম কি যে করো বন্ধু? আমি কি সারাবছর, সারাক্ষণই ঝুঁকিতে থাকি? এখন বয়স হয়েছে, সবাইকে ভাই বন্ধু বলে আপন করে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। আমাকে এমন ভিআইপি ভিআইপি ভাবলে তোর এখানে আর উঁকিও দিবো না।
আমার এসব ক্ষোভ, বকাবকি থোরাই কেয়ার কাজলের। সে বরং উল্টো আমাকেই ঢাকাইয়া গালাগাল দিয়ে বলতো: নিজের ব্যাপারে তোর নিজের কোনো খোঁজ আছে? হাজারো দুর্বৃত্তর লাইফ ধ্বংস করে নিজেরে এখন মসজিদের ইমাম মনে করো? তোমার জন্য কি করবো, না করবো সে ব্যাপারে তুমি জ্ঞান না দিলেও চলবে। তোমাকে বাঁচিয়ে রাখাটাও আমাদের অহংকার, বাদ দাও এসব কথা।
দুই যুগেরও বেশি সময় অভিন্ন স্টাইলে নিরাপদ রাখার চেষ্টায় অবিচল বন্ধু কাজল যেন নিজেই হঠাৎ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছিল। ৫ আগষ্টের বিপ্লব পরবর্তী সময়ে রীতিমত বৈরী পরিবেশের মুখোমুখি দাঁড়ায়। একদা চা, সিগারেট, ফুট-ফরমায়েশ খাটা ছেলেপেলেও ইদানিং নেতা বনেছে, তারাই সেজেছে ভুয়া সমন্বয়ক। মহল্লার ব্যবসা বাণিজ্য, সম্মান, মর্যাদা ছিনিয়ে নেওয়া দুর্বৃত্তরা চাঁদাবাজি, দখলবাজিতে উন্মত্ত। অন্যদিকে নব্য বিএনপি সেজে আরেক গ্রুপ পুলিশের গুলিতে নিহত যুবকের লাশ পুঁজি করে কাজলকে বানিয়েছে খুনি আসামি। এহেন প্রতিকূলতায় নতুন কোনো ঝুঁকি না নিয়ে কাজল চলে যায় পদ্মা ব্রিজ পেরিয়ে শিবচরে। সেখানে তার দীর্ঘদিনের উপকারভোগী এক শিমুলকে নিয়ে খামারবাড়ি গড়ে তোলাসহ কৃষি বান্ধব নানা উদ্ভাবনী কাজে নিজেকে যুক্ত করে, সময় কাটায়। উপজেলা সদরের একাত্তর সড়কে সচল করে স্মার্ট শিবচর নামের বহুমুখী প্রতিষ্ঠানও।
একপর্যায়ে সেখানেও চেনাজানা ২/১ জনের নানা প্রতারণা, টাকা হাতে নেওয়ার ফন্দি ফিকিরে মনক্ষুন্ন হয় বন্ধু আমার। হঠাৎই কাজল জরুরি তলবে আমাকেই নিয়ে যায় শিবচরে। তার মনক্ষুন্নতার কারণ শুনেই আমি ফোন করি মাদারীপুরের এডিশনাল এসপিকে। তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতেই ওয়ারলেসে নির্দেশনা দিয়ে তৎক্ষণাৎ একজন এএসপিকে আমার লোকেশনে পাঠিয়ে দেন। কাজলের বিষয়টিতে পুলিশের আশাতীত রেসপন্স দেখে বন্ধু থমকে দাঁড়ায়, নিজে থেকেই মাফ করে দেয় প্রতারকদের। আমাকে জানায়, ওরা ভুল করে ফেলেছে, সব বুঝতে পেরে খুবই ভয় পাচ্ছে। এবারের মতো তাদের মাফ করে দাও বন্ধু।
আমাদের চেনাজানা দয়ালু কাজলের আপ্লুত আবেগ দেখে আমি শুধু হাসতে থাকি... সে দেখাই কাজলকে শেষ দেখা হয়ে যায়। ঢাকায় ফেরার দুদিন পর থেকেই "রামপুরা ও তুষার বাহিনীর সন্ত্রাস" নিয়ে বন্ধু কাজল প্রতিদিনই আমাকে নতুন নতুন আপডেট লিখে পাঠায়। দিনদিনই বেড়ে ওঠা "তুষার দৌরাত্ম্যই" বন্ধু কাজলকে চিরতরে বিদায় করে দিয়েছে।
কাজলের পাঠানো শেষ নোট
রামপুরা থানা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি কালা পলাশের ভাইগ্না বহু মামলার আসামি, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ দুর্ধর্ষ বাহিনীর প্রধান তুষার।
২০০৮ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও জাইকা হতে পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগঠন হচ্ছে মালঞ্চ। আমার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত মালঞ্চ সংগঠনটি ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে। অথচ সন্ত্রাসী তুষার ও তার বাহিনী সেই মালঞ্চ
সুপারভাইজারদের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি ও অস্ত্রের মুখে যাবতীয় কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিয়েছে। তুষার নিজে দফায় দফায় আমাকেও ফোন করে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।
যে মালঞ্চ প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সালে তিন শতাধিক কর্মতৎপর প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা জাইকা কর্তৃক প্রথম স্থান অর্জন করে। আজ চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী তুষার বাহিনীর হুমকি ও অস্ত্র মহড়ার মুখে মালঞ্চ বন্ধ করে কর্মীদের নিয়ে নিজেও পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হচ্ছি।
মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি এই তুষারের ফোন নাম্বার হচ্ছে ০১৭ ২২০ ২৫৩২১ / ০১৬১১ ৪৪ ৩৪৭৪। এই নাম্বার থেকে গত এক মাসে কত দফা হুমকি দিয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া সম্ভব।
পূর্ব উলোনে জৈন্যক কালাম সাহেবের বাসার নিচ তলায় তুষার বাহিনীর টর্চার সেল পর্যন্ত রয়েছে। তুষারের প্রধান সহযোগী সন্ত্রাসী হচ্ছে জুয়েল। অনেকের কাছে সে সানডে নামেই পরিচিত, তার ফোন নাম্বার হলো ০১৮ ১৭৫ ৪৩২৮৫/
০১৫ ৭৬৫ ৪৭ ৮৯০। বাহিনীর সন্ত্রাসী ক্যাডার বাবু (ফোন নাম্বার ০১৯৭৩ ৮৮৯৭৬৮), আরেক সহযোগী অজ্ঞাত/কাল্লু (ফোন নাম্বার ০১৮৭ ৪৩৫৫ ২৪০), কল পলাশের আরেক ভাইগ্না (০১৩১০ ১৪৩০ ৩০ ৬৯) সহ এ বাহিনীতে ১৫/২০ জন নিয়মিত সদস্য রয়েছে। এই সন্ত্রাসীরা দিনে দুপুরে ওপেন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিলেও কোনো বাহিনী তাদের ধারেকাছেও যায় না। এমনকি যৌথ বাহিনীর অভিযান থেকেও তারা রহস্যজনক কারণে নিরাপদ থাকছে।
বন্ধু, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ । জানো বন্ধু, বিএনপির বন্ধুরা আমার নামে খুনের মামলা দিয়েছে, এজহারে আমার নাম লিখেছে : ময়লা কাজল। জাতিসংঘের অ্যাওয়ার্ড ছাড়াও জাইকা কার্তিক বিরল সম্মাননা পদক পাওয়া সত্ত্বেও আমাকে ময়লা কাজল, খুনি কাজল ইত্যাদি বিশেষণ দেওয়া হয়েছে। এটাও ভাগ্যের পরম পাওয়া বলেই মনে করতে চাই।
আমার জন্য দোয়া কর বন্ধু। মাথার উপর থেকে ঝামেলা - গুলো দূর হলেই শিগগির দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। বন্ধু, আমি কারো ফোন আমি রিসিভ করিনি এ ক'দিন ।
আর.... তুমি তো আমার জীবনের সমস্ত অর্জনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অর্জন। তোমাকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব, দোয়া করিও বন্ধু, আল্লাহ হাফেজ।