বাকরখানি পুরান ঢাকার এক ঐতিহ্যবাহী খাবার, যা মচমচে ও সুস্বাদু স্বাদের জন্য জনপ্রিয়। প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো এই খাবারটি মোঘল আমল থেকে প্রচলিত এবং এখনো ঢাকার খাবারের ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি শুধু একটি খাবার নয়, বরং পুরান ঢাকার সংস্কৃতি ও ইতিহাসের প্রতীক।
বাকরখানির উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে। একটি জনপ্রিয় কাহিনি অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদের নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁনের দত্তকপুত্র আগা বাকের এবং নর্তকী খনি বেগমের প্রেমকাহিনীর স্মৃতিস্বরূপ এই রুটির নামকরণ করা হয় "বাকরখানি"।
অন্য একটি মতানুসারে, এটি প্রথম তৈরি করেছিলেন এক কাশ্মীরি রন্ধনশিল্পী, যিনি মোঘল দরবারের জন্য বিশেষভাবে এই রুটিটি বানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে এটি বাংলার নবাবদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং বিশেষ করে পুরান ঢাকার চকবাজার, উর্দু রোড, এবং বাংলাবাজার এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়।
বাকরখানির বিভিন্ন ধরন রয়েছে, তবে সাধারণত তিনটি প্রকার বেশি জনপ্রিয়—
১. সাধারণ বাকরখানি – এটি অপেক্ষাকৃত শক্ত এবং মচমচে।
২.ঘি বা মাখনযুক্ত বাকরখানি – এতে বেশি পরিমাণে ঘি বা মাখন ব্যবহার করা হয়, ফলে এটি তুলনামূলকভাবে নরম হয়।
৩. মিষ্টি বাকরখানি – এতে চিনি বা গুড় মেশানো হয়, যা একটি মিষ্টি স্বাদ যোগ করে।
বাকরখানি তৈরির প্রস্তুত প্রণালী
প্রয়োজনীয় উপকরণ
ময়দা – ২ কাপ
দুধ – আধা কাপ
লবণ – স্বাদমতো
চিনি – ২ টেবিল চামচ
ডালডা বা ঘি – ৩ টেবিল চামচ
পনির (ঐচ্ছিক) – ২ টেবিল চামচ
ইস্ট বা খামির – আধা চা চামচ
তিল (সাজানোর জন্য) – ১ টেবিল চামচ
প্রস্তুত প্রক্রিয়া
১. খামির তৈরি: ময়দার সঙ্গে ইস্ট, চিনি, লবণ ও দুধ মিশিয়ে খামির বানিয়ে কমপক্ষে ১ ঘণ্টা ঢেকে রাখুন। এতে রুটি তুলতুলে হবে।
২. আকৃতি দেওয়া: খামির থেকে ছোট ছোট বল বানিয়ে গোল বা চ্যাপ্টা করে নিন। চাইলে কাটা চামচ দিয়ে ডিজাইন করতে পারেন।
৩.ঘি বা ডালডা ব্রাশ করা: প্রতিটি রুটির ওপরে হালকা করে ঘি বা ডালডা ব্রাশ করুন, যাতে এটি মচমচে হয়।
৪. বেকিং বা ভাজা:তন্দুর বা ওভেনে বেক করলে: ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ১৫-২০ মিনিট বেক করুন।
চুলায় বানালে: প্যানে হালকা আঁচে দুই দিক ভালোভাবে সেঁকে নিন।
৫. সাজানো: ওপরে তিল ছিটিয়ে পরিবেশন করুন।
আসল বাকরখানি সাধারণত তন্দুরে তৈরি হয়, যা বাসায় তৈরি করা একটু কঠিন।ঘি বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে বাকরখানি বেশি মচমচে হবে। এটি সংরক্ষণের জন্য এয়ারটাইট কন্টেইনারে রাখতে হবে।
বর্তমানে ঢাকার চকবাজার, বংশাল, ইসলামপুর, উর্দু রোড এবং পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মূলত বাকরখানি তৈরি ও বিক্রি হয়। তবে আধুনিক সময়ে কমার্শিয়াল বেকারিতে তৈরি বাকরখানি অনেক জায়গায় পাওয়া গেলেও, পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দোকানগুলোর স্বাদ এখনো অতুলনীয়।
বাকরখানি এখনো জনপ্রিয় থাকলেও কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে—
নকল বা নিম্নমানের বাকরখানি: অনেক নতুন দোকান কম মানের উপকরণ দিয়ে বানিয়ে বাজারে সস্তায় বিক্রি করছে, যা আসল স্বাদ থেকে দূরে।
সংরক্ষণের সমস্যা: এটি দ্রুত নরম বা শক্ত হয়ে যেতে পারে, তাই দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা কঠিন।
প্রচারের অভাব: আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার বাড়ালে এটি বিশ্ববাজারে আরও পরিচিত হতে পারে।
তবে, আধুনিক বেকারি প্রযুক্তি ও সচেতন উদ্যোগের ফলে ভবিষ্যতে বাকরখানি আরও বড় পরিসরে বিস্তার লাভ করবে বলে আশা করা যায়।
বাকরখানি শুধু একটি খাবার নয়; এটি পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ও ইতিহাসের অংশ। মোঘল আমল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত এটি তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর মধ্যে বাকরখানি অন্যতম, যা পুরান ঢাকার সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিচ্ছবি বহন করে।
Chief Editor: Saidur Rahman Rimon
Acting Editor: Neamul Hassan Neaz
Office: +8809611584881, 01320950171
E-mail: newsnbb365@gmail.com
Copyright © 2025 NBB. All rights reserved.