ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানে আহতদের কেউ হারিয়েছেন হাত, কেউ পা। আবার কারও দৃষ্টিশক্তি হারানোর দশা। এদেরই একজন আঠারো বছর বয়সী মুকিত। গত জুলাইয়ে রাজধানীর কাফরুলে পুলিশের টিয়ার শেলে মুকিতের চোখ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিকিৎসার পরও ফেরেনি স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি।
মুকিতের মতো এমন শত শত তরুণপ্রাণ আর তাদের পরিবারের স্বপ্ন বিসর্জনের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আমূল বদলে যাবার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। মুকিত বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি যেখানে তাকাচ্ছি সেখানটাই ব্লার (ঘোলা) হয়ে যাচ্ছে।
ছাত্র জনতা আন্দোলনের শুরুর দিকে ১৯ জুলাই রাজধানীর কাফরুলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিক্ষোভকারীরা। সেখানে ছিলেন মুকিতও। তার চোখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুলিশের ছোঁড়া টিয়ার শেলে। পরে নেয়া হয় জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে। চলে চিকিৎসাও। কিন্তু চোখ ফেরেনি আগের অবস্থায়।
মুকিত বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়েছে। গুলি ছুড়েছে। পরে যা দেখি সব বেগুনি রঙ মনে হচ্ছে, চোখ জ্বলতেছিল। এর তিনদিন পর চোখটা পুরো লাল হয়ে যায়। পরে হাসপাতালে গেলে ডাক্তার বলেন যে চোখে আঘাত পেয়েছি। এর জন্য রেটিনা নষ্ট হয়ে গেছে।
নিয়তি এমনই নির্মম যে পুলিশ বাহিনীর ছোঁড়া টিয়ার শেলে মুকিতের দৃষ্টিশক্তি চলে যাবার দশা। সেই বাহিনীরই ইউনিফর্ম সেলাইয়ের কাজ করেন তার মা। বাবাহীন মুকিতদের পরিবার চলে তাদের মায়ের সেলাইয়ের সামান্য আয়ে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে সন্তান রুখে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়ে চোখের দৃষ্টিশক্তি নিভু-নিভু। দুশ্চিন্তা আছে। তবে ভরসা রাখছেন রাষ্ট্রের ওপর।
মুকিতের মা বলেন, ৯ মাস পেটে ধরে জন্ম দেয়া এরপর কষ্ট করে বড় করার পর একটা ছেলে অন্ধ হয়ে যাবে এই দুঃখ কারো কাছে বলার মত না।
ছবি আঁকা মুকিতের অন্যতম প্রিয় কাজ। এখন আঁকতে- পড়তে বেশ বেগ পেতে হয় তাকে। এরপরও স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় আন্দোলনের অংশ হতে পেরে আক্ষেপের চেয়ে তৃপ্তিই ঝরলো মুকিতের কণ্ঠে।
মুকিত বলেন, আজকে বাংলাদেশ যে একটা পর্যায়ে যাচ্ছে বা যাবে। যদি যায় তাহলে এই চোখের বিনিময়েই তো যাবে। একটু একটু ত্যাগের মাধ্যমেই অনেক বড় কিছু হয়। সেই ত্যাগের মধ্যে আমি থাকতে পেরে ভালো লাগছে। মনে হয় আমি আছি, আমি ছিলাম।
ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানে জুলাই-আগস্টে আহত হয়েছেন ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ।
Chief Editor: Saidur Rahman Rimon
Acting Editor: Neamul Hassan Neaz
Office: +8809611584881, 01320950171
E-mail: newsnbb365@gmail.com
Copyright © 2025 NBB. All rights reserved.