• শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
রাজশাহীত টিসিবির পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ভোক্তারা কিশোরগঞ্জে ফাজিল মাদ্রাসায় ভুয়া কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ সাভারে ৯৪ বোতল ফেনসিডিল সহ দুই মাদক কারবারি গ্রেফতার মিরপুর সাংবাদিক কল্যাণ সমবায় সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি জহিরুল ইসলাম-সম্পাদক মারুক হায়দার দেশজুড়ে অবৈধ আবাসন প্রকল্পের ছড়াছড়ি বিতর্কিত ঢাকা বোট ক্লাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্ছেদ অভিযান সাংবাদিককে হুমকি, অফিসে দাপট ; দুলালের খুঁটির জোর কোথায়? সাভারে ৪০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার কিশোরগঞ্জে খাস সম্পত্তির উপর দিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধের অভিযোগ! ছাত্র-জনতার ওপর গুলির নির্দেশদাতা ৩৯ ম্যাজিস্ট্রেট বহাল তবিয়তে

যে আক্রোশে সাংবাদিক মেহেদী হত্যা!

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
Update : শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫

গুলিবিদ্ধ হয়ে সেখানেই পড়ে ছিল সাংবাদিক হাসান মেহেদীর দেহ:

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন ঢাকা টাইমসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসান মেহেদী (৩১)। গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে টোল প্লাজার ওপরের অংশে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। সেখানেই বেশ কিছু সময় মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করলেও তাকে উদ্ধারে পুলিশের মানবিক সহায়তা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাস্থলে থাকা অপর এক সাংবাদিক বন্ধু পথচারীদের সহায়তায় মেহেদীর নিথর দেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী বাংলাদেশের আলোর স্টাফ রিপোর্টার ইমাম হোসেন ইমন জানান, সারাদিন অন্যান্য সাংবাদিকদের সঙ্গে থেকে পুলিশের আশেপাশে অবস্থান নিয়েই সংবাদ সংগ্রহ করেন হাসান মেহেদী। বিকালে পুলিশের এপিসি-২৫ থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে মুহূর্মুহু টিয়ারশেল ও গুলি ছোড়া হচ্ছিল। হঠাত করেই এপিসি‘র ব্যারেল ডান দিকে ঘুরিয়ে ভিডিওরত মেহেদী হাসানকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। একইসময় শর্টগানের কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণেরও ঘটনা ঘটে। ইমন বলেন, পরক্ষণে তাকিয়েই দেখি গুলিবিদ্ধ হাসান মেহেদী এলিয়ে দুলিয়ে লুটিয়ে পড়ছে। মেহেদী শুধু আর্তনাদ করে ওঠে- ‘ভাই আমার গুলি লেগেছে….‘

এরপরও এপিসি থেকে এদিক সেদিক গুলি চলতে থাকায় মেহেদীর কাছে সাংবাদিক ইমন বা অন্য কেউ পৌছাতে পারেননি। গুলিবর্ষণ থামতেই ইমন ফ্লাইওভারের উপরেই জটলা করে অবস্থান করা পুলিশ সদস্যদের কাছে ছুটে যান। সাংবাদিক মেহেদী গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে থাকার কথা জানিয়ে তাকে উদ্ধারের ব্যাপারে সহায়তার আবেদন জানান তিনি। কিন্তু কেউ সহায়তাটুকু করতেও এগিয়ে যাননি। পরে ইমন ফ্লাইওভারের নিচের অংশে চলাচলকারী পথচারীদের সহায়তায় মেহেদীর নিথর দেহটি উদ্ধারে সক্ষম হন। এদিকে ঢাকা মেডিকেল সূত্র জানায়, সাংবাদিক হাসান মেহেদীর মুখ, গলা ও বুকসহ শরীরে অসংখ্য ছররা গুলির চিহ্ন দেখা যায়। ওইদিন সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল থেকে ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক কাজী মুস্তাফিজ তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। হাসান মেহেদীর বুকে বেশ সংখ্যক গুলির চিহ্ন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

চিরকুট লেখার দশ মিনিটেই লাশ হলো মেহেদী!

ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, ‘নয়াদিগন্তের সাংবাদিক তুরাব আলীর শরীরে ৯৮টা বুলেটের দাগ পাওয়া গেছে, প্রায় একই স্টাইলে মেহেদীকেও গুলি করেছে পুলিশ। মেহেদী ফ্লাইওভারের ওপরে সংবাদ সংগ্রহ করছিল। সেখান থেকে নিচে আরেক সাংবাদিককে সে চিরকুট লিখেছিল, ‘উপরে একটা লাশ পড়ে আছে’। এর ১০ মিনিটের মধ্যে মেহেদীকে গুলি করে মারা হয়।’

মেহেদীর মোবাইল কেড়ে নেন এসি

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা গেছে আরো ভয়ঙ্কর তথ্য। মেহেদীকে গুলি করার আগে ফ্লাইওভারে দায়িত্বরত একজন সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) হঠাত মেহেদীর উপর চড়াও হন। গুলিবর্ষণ ও স্পর্শকাতর কথাবার্তা ভিডিও রেকর্ডিং করার অভিযোগ তুলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা হাসান মেহেদীর ব্যবহৃত মোবাইলটি কেড়ে নেন এবং পাসওয়ার্ড দেয়ার জন্য জোড়াজুড়ি করতে থাকেন। এসময় উপস্থিত অন্য সাংবাদিকদের অনুরোধে মোবাইলটি ফেরত দিলেও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে মেহেদীকে লক্ষ্য করে বলেন, ’যা খুশি রিপোর্ট লিখে ছাপিয়ে দেন, আমিও দেখবো আপনাকে।’
এর পরপরই যাত্রাবাড়ী থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত জাকিরের সঙ্গে ওই এসিকে শলাপরামর্শ করতেও দেখতে পান সংবাদকর্মিরা। পরক্ষণেই ইন্সপেক্টর জাকির এপিসি পাইলটের কাছে দুই দফা ছুটে যান এবং অজ্ঞাত বিষয়ে কথাবার্তা বলেন।

ইন্সপেক্টর জাকিরের পূর্ব আক্রোশ

এদিকে যাত্রাবাড়ী এলাকার প্রতিষ্ঠিত একটি মানবাধিকার সংস্থার মহাসচিব আলমগীর সেলিম জানান, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জাকিরের বিরুদ্ধে একটি মামলায় সাংবাদিক হাসান মেহেদী সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই মেহেদীর প্রতি চরম আক্রোশ ছিল তার। মাঝেমধ্যিই মেহেদীকে তিনি নানারকম হুমকি ধমকি দিতেন বলেও অভিযোগ থাকার দাবি করেছেন আলমগীর সেলিম।

হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহের পাঁয়তারা

মেহেদী হত্যার নয় দিন পর যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ এ হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহের পাঁয়তারা হিসেবে রহস্যময় হত্যা মামলা রুজু করে। ২৭ জুলাই শনিবার যাত্রাবাড়ী থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. হোসেন জায়েদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ”কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে সাংবাদিক মেহেদী হাসান আহত হন। পরে ঢাকা মেডেকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।”

”পুলিশের মামলা মিথ্যা, ভিত্তিহীন”

যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশের দায়েরকৃত মামলাকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করেছেন দিনভর মেহেদীর সঙ্গে একত্রে ঘটনাস্থলে অবস্থানকারী সাংবাদিক ইমাম হোসেন ইমন। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহবল হয়ে পড়া ইমন এখনও রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তা সত্তেও যাত্রাবাড়ী থানায় পুলিশের উদ্দেশ্যমূলক মামলার খবরে তিনি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নিজের টাইম লাইনে তুলে ধরেন সেদিনের পুরো বর্ণনা।

ইমন লিখেন, গত ১৮ জুলাই সকাল থেকে বিকেলে গুলিবিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত পুরো সময়টা আমি, মেহেদি এবং দেশ রূপান্তরের একজন রিপোর্টার একসাথেই ছিলাম। বেলা দুইটার পর ব্রিজের উপরে মেহেদী কিছু দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করতেই পুলিশ অফিসার তার মোবাইলটি নিয়ে যায়। তখন আমরা দুই রিপোর্টার ওই পুলিশ অফিসারকে অনুনয় বিনয় করে মোবাইলটি ফিরিয়ে আনি। পুলিশ অফিসার তখন ধমকের সুরে বলতে থাকেন, নিউজ করবেন করেন কোনো সমস্যা নাই− যান নিউজ করেন।

তিনটার পর আমরা খাওয়া দাওয়া করে আবার ফ্লাইওভারের উপরে উঠি। বিকেল পাঁচটার পর ২৫ নাম্বার এপিসি ট্যাংক কাজলা টোল পোস্টের দিকে এগিয়ে আন্দোলনকারীদের গুলি ছুড়তে ছুড়তে ধাওয়া করতে থাকে। ট্যাংকটি খুব দ্রুত পিছনে ফিরতেই বা পাশে কিছু আন্দোলনকারী আটকে পড়ে যায়, স্থানটি যাত্রাবাড়ী সুফিয়া প্লাজা বরাবর। তখন ট্যাংক থেকে বাম দিকে আটকে পড়া আন্দোলনকারীদের দিকে দেদারছে গুলি ছুড়ে। ওই সময় আমি ও মেহেদী এপিসি ট্যাংকটির ঠিক পিছনের পাশে ছিলাম। মেহেদী রাস্তার মাঝামাঝি আর আমি রাস্তার সাইডে ছিলাম। ট্যাংকটি ফায়ার করতে করতেই আচমকা মেহেদীর দিকে ব্যারেল ঘুরিয়ে গুলি চালায়। মুহূর্তেই সব কিছু শেষ হয়ে গেলৃচিরতরে হারিয়ে ফেললাম অনেক প্রিয় মেহেদী ভাইকে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের অভিমত:
৩০ ফিট দূরে দাঁড়ানো কারো গায়ে এই গুলি লাগলে তার মারা যাবার কথা নয়। কারণ, এই গুলি সোজাসুজি যায় না, ছড়রা আকারে ছড়িয়ে যায়। মেহেদীর শরীরে লাগা বলগুলো খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, প্রতিটি গুলির ৮০% অংশ মেহেদীর দেহে গেঁথে ছিল। তার মানে, মেহেদী পুলিশের ১০ ফিট দূরত্বের মাঝেই ছিল।
ঘটনার সময় পুলিশের দিকেই অবস্থান ছিল মেহেদীর এবং পুলিশ নিশ্চিত হয়েই তাকে হত্যার উদ্দ্যেশ্যে গুলি ছুড়েছে। স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে মেহেদীর ডান হাতের কাধেঁও গুলিগুলো গেঁথে ছিল। মেহেদীর শরীরে কতগুলো গুলি ছিল? সাধারণত একটা ডবল বোরের গুলিতে ৬০টি ছড়রা বা বল থাকে, যার প্রায় সবগুলোই মেহেদীর শরীরে ছিল।
হত্যাকান্ডের আগের দিন অর্থাত ১৭ জুলাই মেহেদী তার ফেসবুকের টাইম লাইনে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণের ভিডিও প্রকাশ করেছিল। পরদিন সেখানেই পুলিশের নির্বিচার গুলিতে প্রাণ হারায় মেহেদী।

পুলিশের ভাষ্য

এসব বিষয় নিয়ে এ প্রতিবেদকের কথা হয় যাত্রাবাড়ী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, সাংবাদিক হাসান মেহেদীর সঙ্গে বরাবরই তার ভালো সম্পর্ক ছিল এবং কোনোরকম বৈরীতা ছিল না। ইতিপূর্বে জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে এক নারীঘটিত মামলায় মেহেদী কর্তৃক সাক্ষী দেওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, পরবর্তীতে ভুল বুঝাবুঝি দূর হলে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মূখপত্র।। NBB

Acting Editor: Neamul Hassan Neaz

Mofussal Editor: Kamrul Hasan Rony

Office: +8809611584881, 01320950171

E-mail: newsnbb365@gmail.com

Translate »