রাজধানীর পরিবহন খাত এখনো চাঁদাবাজদের দখলে। আগের মতোই রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় প্রভাবশালীরা চাঁদার টাকা তুলছে। গোয়েন্দাদের ভাষ্য, সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বিভিন্ন পরিবহন টার্মিনাল ও স্ট্যান্ডে প্রতি মাসে সাড়ে ৬৬ কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি চলছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র বলছে, ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনালকেন্দ্রিক প্রতিদিন কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজির তথ্য পেয়েছে তারা। আবার দেশের পরিবহন খাতে মাফিয়াদের লাগামহীন চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য দুদকের তদন্তেও উঠে এসেছে।
টার্মিনালে চলমান চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় টার্মিনালকেন্দ্রিক চাঁদাবাজির তথ্য পেয়ে যাচাই চলছে।
পুলিশ বলছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির নামের পাশাপাশি সমিতির নামেও চাঁদাবাজির তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কিছু অসৎ ব্যক্তির বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীতে ৫৩টি পরিবহন টার্মিনাল ও স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন দুই কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি হচ্ছে। সেই হিসাবে প্রতি মাসে সাড়ে ৬৬ কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি হয়।
এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগে সাবেক সরকারের লোকজন চাঁদাবাজিতে জড়িত ছিল। এ জন্য টোকেন, রসিদ ও স্টিকার ব্যবহার করত তারা।
হাত বদলের পর এখন নানা কৌশলে চাঁদাবাজি চলছে। এখন ধরা পড়ার ঝুঁকি এড়াতে চাঁদাবাজরা নৈশপ্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও লাইনম্যানের বেতন পরিষদের নামে অভিনব পদ্ধতিতে চাঁদাবাজি করছে। চাঁদার টাকার লেনদেন হচ্ছে নগদ ও বিকাশ ব্যবহার করে।
দীঘদিন ধরে টার্মিনালের পর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাতকেন্দ্রিকও চাঁদাবাজি চলছে। মহাখালীসহ আশপাশের সড়কগুলোতেও চাঁদাবাজি চলছে। গাবতলী ও তেজগাঁও টার্মিনালকেন্দ্রিকও চাঁদাবাজি চলছে।
বর্তমানে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ, হিউম্যান হলার (লেগুনা) এবং অটোরিকশাসহ ৯৫ ধরনের টার্মিনাল এবং স্ট্যান্ড রয়েছে জানিয়ে গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এর মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছে ৬৬টি টার্মিনাল ও স্ট্যান্ড। এর মধ্যে আন্ত জেলা বাসস্ট্যান্ড ও ৩৭টি লেগুনা স্ট্যান্ড রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে সাতটি স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড, পাঁচটি পিকআপ স্ট্যান্ড, চারটি স্থানীয় ও চারটি অটোরিকশা স্ট্যান্ড, তিনটি আন্ত জেলা বাস টার্মিনাল, তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড, দুটি ট্রাক স্ট্যান্ড এবং একটি মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড।
ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, দৈনিক দুই কোটি ২১ লাখ টাকার চাঁদাবাজির মধ্যে এক কোটি ১৭ লাখ টাকা চাঁদাবাজি হয় পরিবহন মালিক সমিতির নামে। সংস্থার পক্ষ থেকে এমন ১১ ধরনের পেমেন্টের প্রমাণ পাওয়া গেছে জানিয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দূরপাল্লার ও মাঝারি পাল্লার বাস, ট্রাক, পিকআপ এবং কাভার্ড ভ্যান, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, হিউম্যান হলার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এমনকি রিকশা থেকেও দুর্বৃত্তরা চাঁদাবাজি করছে।