ঢাকাসহ সারা দেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি। এসব গাড়ি একদিকে যেমন দুর্ঘটনার আশঙ্কা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে, অন্যদিকে সড়কের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই রাজধানীর প্রতিটি রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেস বিহীন গণপরিবহন। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দিনদিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে।
জানালা থেকে শুরু করে কোন কোন বাসের সামনে ও পিছনের বডিও নেই। আর বাসের ভিতরে বসার সিট গুলোর করুন দশা দেখে যাত্রীরা হতাশা নিয়েই বলছে এগুলো দেখার মতো কেউ নেই দেশে। অথচ প্রতিবছর ফিটনেস সার্টিফিকেট নিয়ে রাস্তায় চলাচলের অনুমতি পাওয়ার কথা প্রতিটি বাসের।
আর রাস্তায় অনুমতি ছাড়া নামলে বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি ডাম্পিংএ পাঠানোর কথা। তবে সবার চোখের সামনেই রাজপথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব ফিটনেস বিহীন গাড়ি। কোন অজানা কারণে এসব অনিয়ম চোখে পড়ছে না কর্তৃপক্ষের।
দেশের কোথাও ফিটনেসবিহীন গাড়ি আটক করে তার লাইসেন্স বা রোড পারমিট বাতিল করা হয়েছে, গাড়ি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে- এমন দৃষ্টান্ত মেলা ভার। এমনকি কোনো সড়ক দুর্ঘটনার ন্যায়বিচার হয়েছে-এমন দৃষ্টান্তও পাওয়া দায়।
যাত্রী কল্যান সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক
যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক এই প্রতিবেদককে বলেন, চাঁদাবাজি, অনৈতিক অর্থ লেনদেন এবং রাজনৈতিক নেতাদের সংশ্লিষ্টতার কারণে সড়কে আনফিট গাড়ি চলাচল বন্ধ হচ্ছে না। পদে পদে পুলিশি হয়রানিও একটি বড় বাধা। বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা মহলকে ম্যানেজ করে চলেন মালিকরা।
দেশে লাইসেন্সবিহীন গাড়ি ও চালকের সংখ্যা অনেক। ভুয়া লাইসেন্সধারী কোনো গাড়ি বা চালকের শাস্তির তেমন কোনো নজির নেই। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় পার পেয়ে যায়। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিকট শব্দ ও কালো ধোঁয়া পরিবেশ দূষিত করে। ফলে মানুষের নানা অসুখ-বিসুখ হয়। তাছাড়া এসব লক্কড়ঝক্কড় গাড়িতে যেতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি হয়।
অনেকেই গাড়ির হেল্পার থেকে চালক হয়েছে। তাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। লেখাপড়াও নেই তেমন। অনেকেই অশিক্ষিত। কোনোরকমে নাম দস্তখত করতে পারে। অথচ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাদের হাতেও চলে আসে অরিজিনাল লাইসেন্স! অনেকে ভুয়া লাইসেন্স দিয়েই গাড়ি চালায়। গাড়ি চালানোর সময় অধিকাংশ চালককে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। অনেকে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায় এবং আগে যাওয়ার জন্য পাল্লা দেয়, যার কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। চালক শিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলে এমনটি হতো না।
ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধ করার উদ্যোগ বিভিন্ন সময় নেওয়া হলেও বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া গাড়ির ইঞ্জিন, চেসিস, সিট, বাম্পার, ব্রেক, লাইট, বডিসহ সবকিছু বিজ্ঞানসম্মতভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা থাকলেও কোন প্রকার পরীক্ষা ছাড়াই ফিটনেস সার্টিফিকেট মিলে যাচ্ছে। জনস্বার্থে সরকার ও কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিশৃঙ্খলা নগর জুড়ে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকার রাস্তায় পুরোনো ফিটনেসবিহীন বাস ডাম্পিং নয়, ধ্বংস করে দেয়া হবে। ঢাকা শহরে যে ধরনের লক্কড়-ঝক্কড় ও রংচটা গাড়ি চলে তা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না। ঢাকার বাইরে মফস্বল এলাকা গুলোতে উন্নতমানের গণপরিবহন চলে, ঢাকার মধ্যে কেনো পুরোনো গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, দুর্ঘটনা ঘটলেই বলা হয় গাড়ির ফিটনেস ছিল না। চালকের লাইসেন্স ছিল না। তবে ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধে সড়ক পরিবহণ আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। একটি অসাধু চক্রের কারণে আইনের এমনটি হচ্ছে, যাতে যত নৈরাজ্য থাকবে, তত চাঁদাবাজি করা যায়। এসব কারণে অনেক ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা ঘটছে, যা প্রাণহানি না বলে হত্যাকাণ্ড বলা উচিত।
বিআরটিএ পরিচালক ( রোড সেফটি) শেখ মাহবুব-ই-রাব্বানী
এ বিষয়ে বিআরটিএ'র পরিচালক (রোড সেফটি) মাহবুব-ই-রব্বানী এনবিবিকে বলেন, বিআরটিএ'র ফিটনেস সার্টিফিকেট নিয়েও কোন পরিবহণ আনফিট থাকলে রাস্তায় চলাচল করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে ট্রাফিক পুলিশ কি কারণে পদক্ষেপ নেয় না তা আমার জানা নেই। তবে মাঝেমধ্যে বিআরটিএ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাদের জরিমানা করা হয় বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করা তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৫৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৬৩টি। যা ২০১১ সালে ছিল ১৪ লাখ ২৭ হাজার ৩৬৮টি। হিসেব অনুযায়ী, গত এক যুগে (২০১১-২৩) নিবন্ধিত যানবাহন বেড়েছে ৪৩ রাখ ১৪ হাজার ৪৯৫টি।
এর মধ্যে ৫-৬ লাখের বেশি গাড়ি ফিটনেসবিহীন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র। বৈজ্ঞানিক উপায়ে ফিটনেস পরীক্ষা না করে কৌশলে এসব গাড়ির নিবন্ধন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র বলছে, নিবন্ধিত যানবাহনের বাইরেও সড়কে চলাচল করা গাড়ির মধ্যে একটি বড় অংশই ফিটনেসবিহীন ও চলাচলের অনুপযোগী। অনিবন্ধিত এই যানবাহনের সংখ্যা কত সে তথ্য বিআরটিএর কাছে নেই। এর মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ির পরিমাণ কত সে তথ্য না থাকাটাই স্বাভাবিক।
Chief Editor: Saidur Rahman Rimon
Acting Editor: Neamul Hassan Neaz
Office: +8809611584881, 01320950171
E-mail: newsnbb365@gmail.com
Copyright © 2025 NBB. All rights reserved.