ঢাকার রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) কমান্ড্যান্ট শহীদ উল্লাহ। বাহিনীতে নিম্নমানের ইউনিফর্ম দিয়ে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর রয়েছে ঢাকায় ৫টি ফ্ল্যাট, কুমিল্লায় ৩০ বিঘা জমি। শাশুড়ির নামে ঢাকার অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাটও কিনেছেন। এসব দুর্নীতি করেছেন ২০১৮ সালে ১৮৪ জন সিপাহি নিয়োগে। এসব বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ঢাকার দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. মনোয়ারুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাহিনীতে নিম্নমানের ইউনিফর্ম দিয়ে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের বিষয়ে আরএনবির কমান্ড্যান্ট শহীদ উল্লাহর বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে চিঠিও ইস্যু করেছি।
গত ২৭ জুলাই দুদক থেকে ইস্যু করা চিঠিতে শহীদ উল্লাহর বিরুদ্ধে ৮টি অভিযোগের ওপর নথিপত্র চায় দুদক। এর মধ্যে ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ইউনিফর্ম, বুট, মোজা, রেইনকোট, ফগার মেশিন, হ্যান্ড মাইক বিতরণসংক্রান্ত কাগজ, আরএনবির বিভিন্ন মালামাল ক্রয়ের কাগজসহ ৮টি বিষয়। এর মধ্যে ৩টি বিষয়ে নথিপত্র পেয়েছে দুদক।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার শান্তিনগরে অবস্থিত রূপায়ণ টাওয়ারের তৃতীয় তলায় শাশুড়ির নামে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন শহীদ উল্লাহ। অথচ শাশুড়ির কোনো আয়ের উৎস নেই। যেদিন থেকে কিনেছেন ওই দিন থেকে স্ত্রী, সন্তানসহ সেখানে থাকেন শহীদ উল্লাহ। ঢাকা মহানগরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস সংলগ্ন শান্তিনগরের রূপায়ণ টাওয়ারের তৃতীয় তলার এই ফ্ল্যাটের দাম প্রায় তিন কোটি টাকা। ওই ফ্ল্যাটের পাশেই রয়েছে তাঁর ছয়তলা একটি ভবন। ঢাকার উত্তরায় তিনটি, রাজধানীর মুগদাপাড়ায় আরও দুটি প্লট এবং কুমিল্লায় ঢাকা কুমিল্লা হাইওয়ের পাশে ৩০ বিঘা জমি কিনেছেন বলে অভিযোগ শহীদ উল্লাহর বিরুদ্ধে।
এসবই করেছেন ২০১৮ সালে ১৮৪ জন সিপাহি নিয়োগকে কেন্দ্র করে। ওই নিয়োগে শহীদ উল্লাহ নিজেই ৮৩ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। এখান থেকে বিভিন্ন দপ্তরে ভাগ দেওয়ার পরও অন্তত ১০ কোটি টাকা অবৈধ আয় হয়েছে তাঁর। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কমান্ড্যান্ট শহীদ উল্লাহ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক আমাকে চিঠি দিয়েছে। আমি চিঠির উত্তর দিয়েছি। আমার নামে যেসব সম্পদ আছে বলা হচ্ছে, তা যদি থাকি তদন্তে বেরিয়ে আসবে। আমি তদন্তকে স্বাগত জানাই।
জানা যায়, ১৯৮৬ সালের ২৭ নভেম্বর আরএনবিতে যোগ দেন শহীদ উল্লাহ। ট্রেনিং শেষ ১৯৮৭ সালের ২ মে এএসআই পদে প্রথম নিয়োগ লাভ করেন তিনি। ১৯৯৯ সালের ১২ মার্চ তিনি এসএস হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০০০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ইন্সপেক্টর পদে ঢাকার তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে পদোন্নতি হয় তার। ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি চিফ ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি হয়। ২০১৭ সালের ৯ মে (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সহকারী কমানডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সহকারী কমানডেন্ট পদ লাভ করেন। এরপর ২০২২ সালের ৯ জুন পদোন্নতি পেয়ে কমানডেন্ট হন শহীদ উল্লাহ। ২০০০ সাল থেকেই তিনি ঢাকায় বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।