গ্রামের মাঝখানে প্রাকৃতিক আবহে বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে ‘মাটির মায়া রিসোর্ট’। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার উদয়খালী গ্রামে গড়ে ওঠা এ রিসোর্টের ভেতরে রয়েছে বিনোদনের সব সুযোগ-সুবিধা। ‘জোত’ জমির সঙ্গে বনবিভাগের জমি দখলের মাধ্যমে রিসোর্ট গড়ে তোলা হলেও তৈরি করা হয়নি যাতায়াতের কোনো রাস্তা। স্থানীয়দের চলাচলের জন্য তৈরি করা বেশ পুরনো সরু রাস্তা দিয়েই ওই রিসোর্টের গাড়ি যাতায়াত করে। রাস্তার দুইপাশে অসংখ্য দোকানপাট, বাসাবাড়ি। এরই বড় একটি গাড়ি ঢুকলে বিপরীত দিকে থেকে আসা কোনো অটোরিকশাও পার হতে পারে না। বড় গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অটোরিকশাকে সাইড দিতে গেলে দোকান বা বাসাবাড়ির সঙ্গে লেগে যায়। ওপরে ঝুলানো আছে বিদ্যুতের তার।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনা বাজার থেকে পূর্ব দিকে সাড়ে ৪ কিলোমিটার দূরে এ রিসোর্টের অবস্থান। একটু সামনে রয়েছে রাস নামক আরেকটি রিসোর্ট। রাস্তার করুণ অবস্থার কারণে স্থানীয়রা সব সময়ই থাকেন আতঙ্কে। রিসোর্টে যাওয়ার প্রস্থ ৮-৯ ফুটের মতো। শুধু মাটির মায়াই নয়, শ্রীপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে ওঠা বেশির ভাগ রিসোর্টে যাওয়ার রাস্তাই সরু ও এবড়োথেবড়ো। এ কারণে প্রায় সময়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে আনন্দ ভ্রমণে আসা লোকজনের। সর্বশেষ গত শনিবার সকালে মাটির মায়া রিসোর্টে পিকনিকে যাওয়ার পথে সরু রাস্তার কারণে দোতলা বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ হারালেন আইইটি’র ৩ শিক্ষার্থী।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর নিকটবর্তী গাজীপুরের শ্রীপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে অল্প দামে জমি কিনে ধনাঢ্য ব্যক্তিরা ছোট বড় মিলিয়ে ১৬টি রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন। মূল কারণ, এ অঞ্চলের কৃষি জমির দাম কম ও বনের জমি সহজেই দখল করে আয়ত্তে নেওয়া যায়। এসব রিসোর্টের মালিক বেশির ভাগই রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও সরকারি আমলা। তাদের ক্ষমতা ও শক্তির কাছে মাথানিচু করতে হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। মূলত রিসোর্ট করার প্রচলন শুরু হয় এক যুগ আগে থেকে। তখন স্থানীয়দের চলাচলের জন্য গ্রামের ভেতর দিয়ে পা পথ বা মেঠোপথ ছিল। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও এলাকাবাসীর চাহিদার কথা বিবেচনা করে অল্প পরিসরে এলইজিডি বা ইউনিয়ন পরিষদ মেঠোপথগুলো সংস্কার করে। কোথাও ইটের সলিং, কোথাও আবার পিচঢালা।
গ্রামের ভেতর গড়ে তোলা এত বড় রিসোর্টে দোতলা বাস নিয়ে যাওয়ার জন্য কেন তারা রাস্তা করেনি? গ্রামবাসীর চলাচলের রাস্তা তারা ইচ্ছামতো ব্যবহার করছে। কেউ যদি নতুন করে গ্রামের ভেতর রিসোর্ট গড়ে তোলন তাহলে প্রশস্ত একটা রাস্তা করতে হবে এটাও যেন তাদের বাজেটে থাকে।' প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, শ্রীপুর উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ১৬টির অধিক রিসোর্ট রয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের কাছে ৮টি রিসোর্টের হিসাব রয়েছে।
কোথাও ইটের সলিং, কোথাও গর্ত ধুলায় ঢেকে থাকে দিনভর / ভোগান্তির নাম ঝিনাইদহ-যশোরের ৪৭ কিলোমিটার মহাসড়ক উপজেলা প্রশাসনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, শ্রীপুরে ৩টি রিসোর্টের নিবন্ধন রয়েছে। বাকি গুলোর নিবন্ধন নেই। এক অর্থে অবৈধ ভাবেই চলছে এসব রিসোর্ট।
এসব অভিযোগের বিষয় বক্তব্য নেওয়ার প্রয়োজনে মাটির মায়া রিসোর্টসহ কয়েকটি রিসোর্টে গিয়েও কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসীর বক্তব্য, নিজেরা রাস্তা সংস্কারের জন্য কোনো খরচ না করে সরকারি টাকায় স্থানীয়দের জন্য চলাচলের রাস্তাটি ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছেন। বারবার ভেঙে গেলেও তাদের কিছু আসে যায় না। মানুষের ভোগান্তির শেষ সীমায় এসে এলইজিডি বা ইউনিয়ন পরিষদ রাস্তা সংস্কার করে দেয়। রিসোর্ট থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করলেও রাস্তা সংস্কারের জন্য তাদের কোনো অংশগ্রহণ নেই।'
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান আলী বলেন, 'আমরা ৪টি ক্যাটাগরিতে রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার করে থাকি। এ ৪ ক্যাটাগরিতে কোনো রিসোর্টের রাস্তা নির্মাণ বা সংস্কার করার সুযোগ নেই। স্থানীয়দের চাহিদা ও প্রয়োজনকেই সরকার গুরুত্ব দিয়ে রাস্তা করে। স্থানীয়দের চলাচলের এসব রাস্তায় রিসোর্টের সব মালামাল আনা-নেওয়া ও ভ্রমণে আসা লোকজনের ভারী যানবাহন ঢুকে পড়ায় রাস্তাগুলো বেশি দিন টিকছে না। সরু রাস্তায় আবার দুর্ঘটনাও ঘটছে মাঝে মধ্যে।'
শ্রীপুর বন বিভাগের সাতখামাইর বিট কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, 'মাটির মায়া রিসোর্ট থেকে ইতোমধ্যে কিছু বনের জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। নতুন করে তথ্য পেলে অভিযান পরিচালনা হবে।'
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন বলেন, 'আমি নতুন। পর্যায়ক্রমে সব বিষয়ে কাজ করব। নিবন্ধনবিহীন রিসোর্টের তালিকা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'
Chief Editor: Saidur Rahman Rimon
Acting Editor: Neamul Hassan Neaz
Office: +8809611584881, 01320950171
E-mail: newsnbb365@gmail.com
Copyright © 2025 NBB. All rights reserved.