আওয়ামীলীগ সরকার কর্তৃক পুলিশ দিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দিনের পর দিন নির্যাতন, হয়রানি, গুম, খুন ও স্বৈরাচারী আচরণে বাংলাদেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গনঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতন ঘটায়। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের অবসান হলেও, অবসান হয়নি পুলিশ কর্তৃক সাধারণ মানুষের হয়রানি। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানের লক্ষে ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের পর কিছুদিন সকল সরকারী সেবার সাথে বন্ধ থাকে পুলিশী কার্যক্রম। এতে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে। আর এই সুযোগে কিছু সুযোগ সন্ধানী চক্ররাও বিভিন্ন অপকর্ম করে। ফলে ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষ আইনগত সহযোগিতার আশায় শরণাপন্ন হয় নিকটস্থ থানার। কিন্তু শ্রীপুর থানার বর্তমান দায়িত্বশীলরা আমলযোগ্য অপরাধকে আমলে না নিয়ে উল্টো ‘ওয়ান্টেড ভুক্ত আসামীর কাউন্টার মামলা’ নিয়ে ন্যায় বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের সত্যতাও মিলে চার’টি মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে। দেখা যায, ব্যক্তিগত ভাবে লাভবান হওয়ার কারণে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন মন্ডল। চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর গোসিঙ্গা ইউনিয়নের খিলপাড়া গ্রামের সামসুল হক সরকারের ছেলে মোঃ রুকুনুজ্জামান সরকারকে (৪০) হত্যার উদ্দেশ্যে বাড়িতে ঢুকে এলোপাতাড়ি ভাবে কুপিয়ে মারাত্মক ভাবে জখম করে। পরে মোঃ রুকুনুজ্জামানের বড় ভাই মোঃ আক্তারুজ্জামান সরকার বাদী হয়ে শ্রীপুর মডেল থানায় হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করার অপরাধে একটি মামলা দায়ের করেন ( মামলা নং-১৮ )। কিন্তু সেই মামলার এজাহারভুক্ত ২ নং আসামী শাহীন কামাল বাদী হয়ে একই অভিযোগে থানায় স্বশরীরে হাজির হয়ে ৭ দিন পর ১৮ সেপ্টেম্বর একটি কাউন্টার মামলা করেন (মামলা নং-২৯)। মামলার বাদী মোঃ আক্তারুজ্জামান সরকার এ প্রতিবেদককে বলেন, আসামীরা আদালত থেকে জামিন না নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এজাহার ভূক্ত মামলার ২ নং আসামী স্বশরীরে থানায় গিয়ে কিভাবে আমাদের বিরুদ্ধে কাউন্টার মামলা দায়ের করে? থানা পুলিশ অবগত আছেন শাহীন কামাল মামলার এজাহারভূক্ত আসামী তারপরও পুলিশ আসামীকে গ্রেফতার না করে তার দেয়া মামলা এজাহার হিসাবে গ্রহন করেন। আসামীরা বাদী ও তার পরিবারকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে আসছে। অগ্যাত কারনে আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশ তৎপর ছিলোনা। ৫ জন আসামী আদালত থেকে জামিন নিয়ে আমাদের মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য হুমকি প্রদান করছে। আর বাকি ৫ জন এখনো পলাতক আছে। পুলিশ আসামীদের খুজতে কখনো এলাকায় আসেনি বলে এলাকাবাসী অভিযোগ। পুলিশকে মোটা অংকের টাকার দিয়ে আসামীরা এখনো ধরা-ছোয়ার বাইরে রয়েছে বলে দাবী করছেন বাদী পক্ষ। খিলপাড়া এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, আসামীরা প্রতিনিয়ত বাদী পক্ষকে হুমকি দিচ্ছে এবং বলে বেড়াচ্ছে এইবার যদি সুযোগ মতো পাই তবে গলা কেঁটে গাছে ঝুলিয়ে রাখবে।
ঠিক একই ভাবেই অক্টোবরের ৭ তারিখে মোঃ রফিকুল ইসলাম রবিন বাদী হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করার অপরাধে মোঃ শাহেদ আলমগীর আকন্দ কে ১ নম্বর আসামী করে মামলা করেন ( মামলা নং-০৮ )। কিন্তু এর ৪ দিন পর অর্থাৎ ১১ অক্টোবর মোঃ শাহেদ আলমগীর আকন্দ নিজেই বাদী হয়ে স্বশরীরে থানায় হাজির হয়ে রবিনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে মামলা করেন ( মামলা নং-১৬ )। এছাড়াও সাধারণ ডাইরি ও আমলযোগ্য অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ না করা, টাকার বিনিময়ে আসামিদের প্রকাশ্যে থাকার অনুমতি দেওয়া এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের দেওয়া হত্যা মামলায় আসামি না ধরার শর্তে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ওসি জয়নাল আবেদীন মন্ডল জানান, সকল মামলাই আইন অনুযায়ী নিয়ম মেনে করা হয়েছে। কোনটা সত্য মামলা কোনটা কাউন্টার মামলা এগুলো তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।