• বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ১১:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম
রাজশাহীত টিসিবির পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ভোক্তারা কিশোরগঞ্জে ফাজিল মাদ্রাসায় ভুয়া কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ সাভারে ৯৪ বোতল ফেনসিডিল সহ দুই মাদক কারবারি গ্রেফতার মিরপুর সাংবাদিক কল্যাণ সমবায় সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি জহিরুল ইসলাম-সম্পাদক মারুক হায়দার দেশজুড়ে অবৈধ আবাসন প্রকল্পের ছড়াছড়ি বিতর্কিত ঢাকা বোট ক্লাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্ছেদ অভিযান সাংবাদিককে হুমকি, অফিসে দাপট ; দুলালের খুঁটির জোর কোথায়? সাভারে ৪০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার কিশোরগঞ্জে খাস সম্পত্তির উপর দিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধের অভিযোগ! ছাত্র-জনতার ওপর গুলির নির্দেশদাতা ৩৯ ম্যাজিস্ট্রেট বহাল তবিয়তে

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর অভিভাবকদের আস্থাহীনতা বাড়ছে কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update : শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

প্রাথমিক থেকে ছাত্র-ছাত্রী হ্রাস পাওয়ার সত্যতা দেখতে পেলাম সরকারের প্রকাশিত প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটি বলছে, প্রাথমিকে ৮ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে এক বছরে। যে বছর দেশে করোনা মহামারি শুরু হয়েছিল, অর্থাৎ ২০২০ সালে দেশে প্রাথমিকে মোট শিক্ষার্থী ছিল দুই কোটি ১৫ লাখের বেশি; কিন্তু পরের বছর তা সাড়ে ১৪ লাখের বেশি কমে গিয়েছিল। ২০২২ সালে এসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আবার বেড়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে তা আবারও হ্রাস পায়। পরবর্তী সময়ে বরিশালের একজনের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, পরিস্থিতি তাদের ওদিকেও এরকম।

ময়মনসিংহের এক গ্রাম থেকে ঘুরে আসার পর আমার পরিচিত দুজন খবর দিল যে, ওই এলাকার সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলো দিন দিন খালি হয়ে যাচ্ছে। পাকা স্কুল হয়েছে, নতুন বেঞ্চি দেওয়া হয়েছে, সিলিং ফ্যান দেওয়া হয়েছে গ্রামের স্কুলগুলোতে। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমছে। গত দুয়েক বছর ধরেই তারা গ্রামে বেড়াতে গিয়ে এমনটাই দেখছেন।

জানতে চাইলাম, তাহলে কি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বাচ্চারা? ওরা জানালো, না সবাই মাদ্রাসায় পড়তে যাচ্ছে। সরকারি প্রাথমিক স্কুলে বসার জায়গা থাকা সত্ত্বেও আসন খালি পড়ে আছে। অথচ মাদ্রাসায় বারান্দায় বসে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস করছে।

পরে ওই এলাকার কয়েকজন জ্যেষ্ঠ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে কেন সরকারি প্রাথমিক স্কুলের পরিবর্তে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে, তা জানতে পারলাম।

স্থানীয়রা মনে করেন, সরকারি প্রাথমিক স্কুলে নীতি-নৈতিকতা ও ধর্ম-কর্ম সেভাবে শেখানো হয় না, যেটা মাদ্রাসায় হয়। মাদ্রাসায় পড়াশোনা করলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ধর্মভাব জেগে ওঠে। ফলে তারা ভবিষ্যতে বা পরকালে বেহেশতে যেতে পারবে। বিশেষ করে মেয়েরা পর্দা মেনে চলার শিক্ষা পায়।

প্রাথমিক থেকে ছাত্র-ছাত্রী হ্রাস পাওয়ার সত্যতা দেখতে পেলাম সরকারের প্রকাশিত প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটি বলছে, প্রাথমিকে ৮ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে এক বছরে। যে বছর দেশে করোনা মহামারি শুরু হয়েছিল, অর্থাৎ ২০২০ সালে দেশে প্রাথমিকে মোট শিক্ষার্থী ছিল দুই কোটি ১৫ লাখের বেশি; কিন্তু পরের বছর তা সাড়ে ১৪ লাখের বেশি কমে গিয়েছিল। ২০২২ সালে এসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আবার বেড়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে তা আবারও হ্রাস পায়। পরবর্তী সময়ে বরিশালের একজনের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, পরিস্থিতি তাদের ওদিকেও এরকম।

প্রাথমিক স্কুলগুলোতে পড়াশোনা ও বই ফ্রি। উপরন্তু বর্তমানে প্রাথমিকে প্রায় এক কোটি ৩২ লাখ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পায়। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মাসে ৭৫ টাকা ও প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী ১৫০ টাকা পায়। এছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে (ছয় শতাধিক) ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা মাসে ২০০ টাকা করে পায়।

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এ বলা হয়েছিল, প্রাথমিকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত হবে ১: ৩০। প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির তথ্য বলছে, বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এ অনুপাত তার চেয়ে এখন কম; যা ইতিবাচক। দেশে এখন গড়ে ২৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক আছেন।

এত সুবিধাদির পর, আনুপাতিক হারে বেশি শিক্ষক নিয়োগের পর এবং ভালো অবকাঠামো নির্মাণের পরেও কেন সরকারি প্রাথমিক স্কুলে না পড়ে শিশুদের মাদ্রাসায় পাঠানো হচ্ছে? শিক্ষার্থী হার কমতে থাকায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর অভিভাবকদের আস্থাহীনতা কেন বাড়ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সরকার প্রাথমিক স্কুলগুলোতে ভালো শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে, ল্যাপটপ দেওয়ার চেষ্টা করছে, মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা করছে, উপবৃত্তি দিচ্ছে, বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ, প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণসহ আরো অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। অন্যদিকে কিন্ডারগার্টেনগুলোতে শিশুদের বেতন বেশি। ইংরেজি মাধ্যমে খরচ আরো অনেক বেশি। কিন্তু সরকারি স্কুল ছেড়ে চলে যাওয়া ও মাদ্রাসা এবং ইংরেজি মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার কারণ নিয়ে কি কোনো সমীক্ষা ও গবেষণা চালানো হয়েছে?

এক বছরে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ৮ লাখ ৩২ হাজারের বেশি কমার পেছনে কারণ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাপস কুমার বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রথমত, শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মাদ্রাসা শিক্ষায় ঝুঁকেছে, আরেকটি অংশ ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ে গেছে। এছাড়া কিছুটা অর্থনৈতিক চাপে কিছু শিক্ষার্থী স্কুল ছেড়ে শ্রমে নিয়োজিত হয়েছে।

দেশের উপজেলা পর্যায়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন স্কুল। এগুলোর মান নিয়ন্ত্রণে কোনো নজরদারি নেই। যে যেমন ইচ্ছা সে রকম কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অভিভাবকরা শুধু রেজাল্টের উপর দৃষ্টি দেন। ফলে বড় স্কুল, ভালো ফলাফল দেখে তারা সন্তানকে যেকোনো প্রকারে সেই স্কুলগুলোতেই ভর্তি করানোর জন্য অধীর হয়ে ওঠেন। অথচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ করে মফস্বল এলাকার অনেক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর আসন ফাঁকা পড়ে থাকছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? কেন এত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রতি অভিভাবকদের অনাগ্রহ? তবে কি অভিভাবকরা সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের তুলনায় কিন্ডারগার্টেন, ইংলিশ মিডিয়াম, মাদ্রাসা শিক্ষার উপর বেশি আস্থা রাখছেন?

প্রায় তিন-চার বছর আগে বিবিসি তাদের একটি রিপোর্টে বলেছিল, বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার শতকরা ৯৮ ভাগ হলেও শিশুরা মানসম্মত শিক্ষা পাচ্ছে না। বিশ্বব্যাংক বলেছে, প্রাথমিকের ৬৫ ভাগ শিক্ষার্থী বাংলাই পড়তে পারে না। ইংরেজি আর গণিতে অবস্থা এর চেয়েও দুর্বল। এদের অনেকে অক্ষরও চেনে না। শিক্ষকরা মনে করেন এই বাচ্চাগুলোকে বাসায় পড়ানোর মতো কেউ নেই। এছাড়া শতকরা ৫০ ভাগ শিক্ষকের বছরের পর বছর কোনো প্রশিক্ষণও হয় না। ইউনেস্কো বলেছে, বাংলাদেশে শিক্ষকদের ট্রেনিং পাওয়ার হার এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম।

কিন্ডারগার্টেন ছাড়াও কেন ইংরেজি মাধ্যম ও মাদ্রাসায় বেশি সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী ভিড় করছে? আধুনিক অভিভাবকরা মনে করেন, সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালে তারা ইংরেজিতে চৌকস হবে, দ্রুত ইংরেজি বলতে শিখবে, ভালো চাকরি হবে, বিদেশে যেতে পারবে। যদিও এসব কিছু অর্জন করতে হলে অভিভাবকের প্রচুর টাকা-পয়সা থাকতে হবে অথবা ছাত্র-ছাত্রীকে মেধাবী হতেই হবে। ভালো স্কোর না হলে, স্কলারশিপ পাওয়া যায় না।

আবার ইংরেজি মাধ্যমে পড়লেই যে সেই ভাষাসহ অঙ্ক, সাহিত্য, ইতিহাস ও বিজ্ঞানে ভালো হবে, তাও বলা বলা যায় না। অনেকে তো পড়াই শেষ করতে পারে না। ভালো চাকুরি পাওয়া তো আরো পরের কথা। তাছাড়া ইংরেজি মাধ্যমসহ বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনে কী পড়ানো হচ্ছে, কীভাবে পড়ানো হচ্ছে, কারা পড়াচ্ছেন, কত টাকা টিউশন ফি ধার্য করা হচ্ছে, এগুলো মনিটরিং করা হয় না নিয়মিত।

অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা কিন্তু এখন আর ফ্রি নয়, সেখানে টাকা দিয়েই পড়তে হচ্ছে। এক সময় আমাদের ধারণা ছিল মাদ্রাসা শিক্ষা ফ্রি, থাকা-খাওয়া ও ছাত্রাবাস ফ্রি বলে এখানে প্রচুর বাচ্চাকে ভর্তি করা হয়। বিশেষ করে পিতৃ-মাতৃহীন অনাথ বা দরিদ্র পরিবারের শিশুরা এখানে পড়ার জন্য আসে। অথচ এখন শিশুদের টাকা দিয়েই মাদ্রাসায় পড়াসহ ছাত্রাবাসে থাকতে হচ্ছে।

মাদ্রাসা শিক্ষার মান, শিক্ষকের মান ও পঠিত টেক্সট বইয়ের কোয়ালিটি ইত্যাদি নিয়ে কি কোনো সমীক্ষা ও গবেষণা হয়েছে? ইসলাম ও ইসলাম ধর্মের আধুনিক দিক নিয়ে পড়াশোনা করেন যেসব আলেম-ওলামা, তাদের দিয়ে কি মাদ্রাসা বোর্ডের টেক্সট বই মূল্যায়ন করা হয়? সেখানে বসবাসের পরিবেশ, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, নীতি-নৈতিকতা কতটা মানা হয়, এসব নিয়ে কি কোনো সমীক্ষা হয়েছে?

মাদ্রাসার সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা হয় যে বিষয়গুলো নিয়ে সেগুলোর একটি হচ্ছে সেখানে নানাভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের মারধর ও বাজে ব্যবহার করা হয়। আরেকটি হচ্ছে যৌন হয়রানির অভিযোগ।

গত দুয়েক বছরের মধ্যে মাদ্রাসায় যৌন হয়রানির বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এর আগেও আরো ঘটনা ঘটেছে। বাবা-মা সরল বিশ্বাসে সন্তানকে মাদ্রাসায় পড়তে পাঠান আলেম হবে বলে। আবাসিক ব্যবস্থা থাকায় এবং বিনা খরচে বা কম খরচে পড়ানো যায় বলে মাদ্রাসা শিক্ষা অনেক বেশি আকর্ষণীয়।

২০২০ সালে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত ”শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশু নির্যাতন ও যৌন হয়রানি বন্ধে করণীয়” শীর্ষক এক ওয়েবিনারে উল্লেখ করা হয়- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে কওমি ধারার মাদ্রাসায় নজরদারি না থাকার কারণে সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর যৌন নির্যাতনসহ অন্য নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীনে না থাকায় কওমি মাদ্রাসায় ঠিক কী হচ্ছে এবং কীভাবে এখানে নিপীড়ন বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব, তা স্পষ্ট নয়। কওমি  মাদ্রাসাসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা এতদিন ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও এখন সেসব ঘটনা ক্রমশ সবার সামনে চলে আসছে।

‘নিখোঁজ সংবাদ: মাদ্রাসায় শিশু-কিশোরের সংখ্যা কেন বেশি’ এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের জুলাইয়ের প্রথম দেড় সপ্তাহ ধরে শিশু-কিশোর নিখোঁজের খবরাখবর ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দেখা যাচ্ছে, নিখোঁজ হওয়া সবাই শিশু-কিশোর, যাদের বয়স ৯ থেকে ১৬ বছর। স্কুলপড়ুয়া দুই মেয়ে ছাড়া নিখোঁজ হওয়া বাকি ১১ জনের সবাই ছেলে এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। তার মধ্যে চারজন হেফজ মাদ্রাসার (যেখানে কোরআন মুখস্থ করানো হয়) বলে নিশ্চিত করা গেছে। আটজন শিক্ষার্থী পড়াশোনার চাপ বা পড়া না শেখায় শাস্তির ভয়ে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যায় বলে তাদের অভিভাবকেরা জানিয়েছেন।

৭ জুলাই দৈনিক আজকের পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিখোঁজদের মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। যারা মূলত মাদ্রাসায় থাকতে অনীহা ও লেখাপড়ার প্রতি ভীতি থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছিল। নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া, পড়াশোনা ও পরীক্ষার চাপ বা শাস্তির ভয়ের কারণে শিক্ষাবর্ষের প্রথম কয়েক মাসে মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীদের পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। অতীতেও এ রকম ঘটনা দেখা গেছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা হ্রাস পেলেও কমছে ঝরে পড়ার হার। এবার ঝরে পড়ার হার ১৩ শতাংশের সামান্য বেশি, যা আগের বছর ছিল প্রায় ১৪ শতাংশ। আর ২০২০ সালে এই হার ছিল ১৭ শতাংশের মতো।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঝরে পড়া কমার ক্ষেত্রে উপবৃত্তি বড় ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) করা ‘বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান-২০২৩’ ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, চার বছরের ব্যবধানে সরকারের অধীনে থাকা মাদ্রাসাগুলোতে (দাখিল ও আলিম ধারার মাদ্রাসা) আড়াই লাখের বেশি শিক্ষার্থী বেড়েছে। বর্তমানে মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থী ২৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি। এর মধ্যে ছাত্রী প্রায় ৫৪ শতাংশ।

শুধু প্রাথমিক স্কুল থেকেই নয়, চার বছরের ব্যবধানে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে। তবে একই সময়ে কারিগরি, মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার্থী বেড়েছে, ব্যানবেইস এর প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তবে ঠিক কী কারণে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী কমেছে, এর কারণ বিশ্লেষণ করেনি ব্যানবেইস। কর্মকর্তাদের কারো কারো ধারণা, করোনা পরিস্থিতির প্রভাবে অনেক শিক্ষার্থী সাধারণ ধারার পড়াশোনা ছেড়ে ভিন্ন ধারায় চলে গেছে।

সরকার কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছে। এর ফলে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যায় সমতা এলেও কারিগরিতে ছাত্রীদের হার এখনও অনেক কম। কারিগরিতে যত শিক্ষার্থী পড়ে, তার মধ্যে ২৯ শতাংশের মতো ছাত্রী। বর্তমানে ১২৩টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করছে ২৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী; যা চার বছর আগে ছিল ২৬ হাজারের বেশি।

সময় এসেছে সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলোর দুর্বলতা চিহ্নিত করার। সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ মাদ্রাসায় ছাত্র-ছাত্রী নিপীড়ন ও যৌন নির্যাতন বন্ধে একটা সামগ্রিক অ্যাপ্রোচ নিতে হবে। শিক্ষাবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এদেশের ব্যাপক সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হতে পারে সরকারি স্কুলগুলো। বিনা খরচে বা কম খরচে ভালো শিক্ষা পাওয়ার যথাযথ জায়গা হতে পারে একটি মানসম্মত সরকারি স্কুল।

বিশ্বের যেকোনো দেশে প্রাথমিক শিক্ষাই সব ধরনের শিক্ষার মূল। কারণ তারা মনে করে শিশু স্কুলে যে পড়াশোনা শিখবে, যেভাবে পড়া শিখবে, যা জানবে সেটাই তার মনন গঠনের জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে। সেজন্য দেশের সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলোর উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, যেন শিশুরা বিনা খরচায়, আনন্দের সাথে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।


লেখক: যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মূখপত্র।। NBB

Acting Editor: Neamul Hassan Neaz

Mofussal Editor: Kamrul Hasan Rony

Office: +8809611584881, 01320950171

E-mail: newsnbb365@gmail.com

Translate »