সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং বস্ত্র ও পাট অধিদপ্তরের অর্থ শাখার যুগ্ম সচিব এস এম মাহফুজুল হক টেন্ডার বাজি ও কেনাকাটায় ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বর্তমানে এলপিআরে আছেন।
জানা যায়, সাবেক জেলা প্রশাসক ও পাট অধিদপ্তরের পরিচালক মাহফুজুল হক বিভিন্ন দপ্তরে থাকাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ ঘরনার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দুর্নীতির রাম রাজত্ব কায়েম করেছিলেন, যেন দেখার কেউ ছিলনা।স্বৈরাচারী শাসনামলে দেশে এমন একটি খাত পাওয়া যাবেনা যেখানে ইচ্ছেমতো দুর্নীতি, লুটপাট, অনিয়ম হয়নি। যে কারনে বিশ্বের দুর্নীতিবাজ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম সবার আগে আসে । এই মুহূর্তে দুর্নীতি বাজদের নতুন তালিকা করলে মাহফুজুল হকের নাম সবার উপরে থাকবে বলে অনেকেই মনে করেন। দুর্নীতি শুধু পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং রাজস্ব বিভাগের ছাগল কান্ডের মতিউর রহমান পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নেই। সাবেক সরকারের আমলে প্রত্যেকটা সেক্টরের রন্দ্রে রন্দ্রে দুর্নীতি ছিল, যে কারণে দুর্নীতির বোঝা মাথায় নিয়েই স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। আর এই স্বৈরাচারী সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যে সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন তাদের মধ্যে মুন্সীগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক মাহফুজুল হক অন্যতম। এদের ন্যায় কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ধস নামতে থাকে এদেশের অর্থনীতিতে এখানেও তিনি যুগ্ম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এক সময়ের সোনালী আশ খ্যাত প্রতিষ্ঠানটি মাহফুজুল হকের মতো কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে আলোর মুখ দেখতে পায়নাই। এছাড়াও আগারগাঁও স্থলবন্দরসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে তিনি চাকরি করেন। সেখানে গত আওয়ামী সরকারের আমলে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি করে ইচ্ছে মতো নিজ আখের গুছিয়েছে তারা। রুগ্ন হয়েছে সরকারি কোষাগার, আংগুল ফুলে কলাগাছ হয় মাহফুজুলরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দপ্তরটির কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানায়, দপ্তরের টেন্ডার বানিজ্য থেকে শুরু করে দাপ্তরিক কেনাকাটাসহ সকল কার্যক্রম চলতো তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে। চোখের সামনে কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে জানার পরেও আমরা কিছু বলতে পারি নাই। সে নাকি সরাসরি শেখ হাসিনার লোক, এই লীগ কার্ড খেলেই আজ শত কোটি টাকার মালিক মাহফুজুল হক।
তার সম্পদের ফিরিস্তি দেখে প্রশ্ন উঠেছে, একজন সরকারি কর্মকর্তা কী করে এতো সম্পদের মালিক হলেন? জমি, বিভিন্ন জায়গায় ফ্ল্যাট, বব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, দেশে-বিদেশে সম্পদ কী নেই তার? জনমনে প্রশ্ন তুলেছে নিজের বা পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে এত সম্পদ গড়লো রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিষ্ঠানের নজরে এলোনা কেন? সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, বাংলাদেশের সরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি ৫ বছর পর পর সম্পদের বিবরণ জমা দেয়ার কথা। আবার সরকারি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তাদের ব্যবসা করারও কোনো সুযোগ নেই। কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতি করলে দুর্নীতি দমন কমিশনের সেগুলো দেখার কথা। কিন্তু এত সব নিয়ম কানুন যেন কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ!
এস এম মাহফুজুল হক, পদবী- সাবেক পরিচালক ( অর্থ ও প্রশাসন) পদ মর্যাদা যুগ্ম-সচিব পাট অধিদপ্তর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়। পিতা- শেখ দবির উদ্দিন আহমেদ, মাতা-জোবেদা খাতুন, তার স্থায়ী ঠিকানা : পুরাতন বাজার মেইন রোড, ওয়ার্ড নং-৫, বাগেরহাট পৌরসভা, থানা ও জেলা: বাগেরহাট। মাহফুজুল বর্তমানে পিআরএলে আছেন। ১৯৯৩ সালের ১ এপ্রিলে ৯ম গ্রেডে মাহফুজুলের চাকরির যাত্রা শুরু এবং বেতন ছিলো ২৮৫০ টাকা।চাকরির এই দীর্ঘ সময়ে বেশ কয়েকটি গ্রেড অতিক্রম করে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর গ্রেড-৩ নিয়ে অবসরে যায় এবং সর্বসাকুল বেতন ছিল ৫৬,৫০০/৭৪,৪০০ টাকা। সে হিসেবে মাহফুজুল হক মোট ৩০ বছর সরকারি চাকরি করে এবং ৯টি ব্যাংক একাউন্টের তথ্য পাওয়া যায়। (১) অগ্রনী ব্যাংক জাতীয় প্রেসক্লাব শাখা (২) সোনালী ব্যাংক সচিবালয় শাখা (৩) জনতা ব্যাংক পল্টন শাখা (৪) ন্যাশনাল ব্যাংক বিজয়নগর শাখা (৫) প্রাইম ব্যাংক আসাদগেট শাখা (৬) উত্তরা ব্যাংক আসাদগেট শাখা (৭) ইসলামী ব্যাংক আসাদগেট শাখা (৮) রুপালী ব্যাংক শাখা শ্যামলি হলের পেছনে এছাড়া (৯) উত্তরা ব্যাংক শাখা, একাউন্ট নং-S/AC-1024/111/011-15774 আওলাদ হোসেন মার্কেট, মোহাম্মদপুর- ঢাকা। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত বাসাও ফ্লাটের তথ্য (১) বাসা নং-৯/২০, দি টিআরা হাউজ, ফ্লাট নং-৩/৪, ইকবাল রোড, ব্লক-এ, ৪র্থ তলা মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭ এখানে ও ১টি ফ্লাট আছে যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক ২ কোটি টাকা । (২) ৯/২৩ ইকবাল রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক ৩ কোটি টাকা (৩) ক্লাসিক হোমস ১০৫/২,তেজকুনি পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫ এখানে তার একটি ফ্লাট যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। (৪) আগারগাঁও ২৪/৮, ৪র্থ তলায় ১টি ফ্লাট যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক ২ কোটি টাকা। এছাড়াও বিজয় স্বরনি -২ বাড্ডা-১ বনানী-১ মিরপুর-১ গাবতলী টেকনিক্যাল-১ মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক থাকাকালীন একটি ৩ তলা বাড়ী ও ৩ বিঘা জমি ক্রয়, যশোর ডাক বাংলোর মোড়ে মেইন রোডের সাথে দোকানসহ ১টি ৫ তলা বাড়ী ক্রয় করেছেন। বাগের হাটে নিজ গ্রামে বানিয়েছেন ৪ তলা বাড়ী। এভাবেই প্রশাসনকে অবৈধভাবে ব্যাবহার করে দেশের আনাচে- কানাচে, নামে- বেনামে গড়েছে শত কোটি টাকা মূল্যের সম্পদের পাহাড়। সম্পদের পাশাপাশি মাহফুজুল কিনেছেন দামী গাড়িও নম্বর ঢাকা- মেট্রো-গ, ৩৪-৬০০৭, যার মূল্য ৪৪,৬৫,৮০০ টাকা।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে বস্ত্র ও পাট অধিদপ্তরের অর্থ শাখার সাবেক যুগ্ম সচিব এস এম মাহফুজুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি এলপিআরএ চলে এসেছি।