পাশাপাশি টকশোতে এসে বিগত সরকারের পক্ষে সুবিধাভোগীদেরকে মন্ত্রের মতো মুখস্ত গতবাধা স্তুতিপাঠ করতেও দেখেছি। এমনকি, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে সেইসব স্বনামধন্য, অত্যন্ত মেধাবী, অভিজ্ঞ সিনিয়র সাংবাদিকদের অনেকেরই নির্লজ্জভাবে চাটুকারিতার প্রতিযোগিতাও ছিল নজিরবিহীন।
এবার আসি আমার লেখার মূল প্রসঙ্গে। সম্প্রতি সাংবাদিক মুন্নি সাহার গ্রেপ্তার, আবার মধ্যরাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া এবং ব্যাংকে তার এত টাকা কীভাবে লেনদেন হয় ও জমা থাকে, সেসব নিয়েও বিস্তর লেখালেখি হয়েছে এবং এখনও তা চলছে। যদিও ব্যাংকের লেনদেন ও টাকার মালিক নাকি মুন্নি সাহা নন। মূলত সেসবের মালিক তার স্বামী! সেসব নিয়েও কেউ কেউ বিস্তারিতভাবে লিখেছেন।
যদিও আজকাল এই ডিজিটাল জামানায় রাজধানীর বাইরেও দেশের বিভাগীয় শহর, জেলা শহর এমনকি উপজেলা শহরেও ‘নাকি’ সাংবাদিকতা পেশায় যুক্তদের অনেকেই এমন সব অর্থ-বিত্ত বৈভবের অধিকারী হয়েছেন! তবে এসব ‘শোনা’ অভিযোগ আসলেই কতটা সত্য, দুদকসহ সেটি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুরুত্ব দিয়ে যদি খতিয়ে দেখে দেশের ১৮ কোটি সাধারণ মানুষের সামনে সেসব বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হত, তাহলে বিষয়টি জনগণের কাছে একদম পরিষ্কার হয়ে যেত।
যাক, যেটি বলছিলাম, আপনারা নিশ্চয় জানেন, মুন্নি সাহা গ্রেপ্তার হওয়ার আগে একাত্তুর টিভির সাংবাদিক দম্পতি ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদ গ্রেপ্তারের পরও এই দম্পতির ধনসম্পদের পরিমাণ বিভিন্ন লেখায় পড়ে রীতিমত ‘তাজ্জব’ বনে গেছি। আসলেই কি এসব তথ্য সত্য?
বলি, এত শত কোটি টাকা ও এত গাড়ি-বাড়ি সহায়-সম্পত্তির “মালিক” একজন সাংবাদিক কী করে হন? যদিও মুন্নি সাহা গ্রেপ্তারের পর মধ্যরাতে আবার ছাড়া পেয়ে এখন মুক্ত জীবনে থাকা, তিনি ১৩৪ কোটি টাকার বিষয়ে তার ফেসবুকে একটি বিশদ ব্যাখা দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন।
আমরা মনে করি, এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে এসবের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া খুবই দরকার। তাই বর্তমান অন্তবর্তীকালীন এই নির্দলীয় সরকারের কাছে আমার একটি বিশেষ অনুরোধ থাকবে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগের একটি সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক। যেহেতু কোনো দলীয় সরকারের পক্ষেই সাংবাদিকদের অনৈতিকতার বিরুদ্ধে বিশেষ করে রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকা দলের যারা অনুগত, চাটুকার, দলকানা থাকেন তাদের বেলায় বড় ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেয়া সাধারণত সম্ভব হয় না। সেহেতু বর্তমান নির্দলীয় সরকার একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিটি গঠন করে রাজধানীসহ সারাদেশে কোন্ কোন্ সাংবাদিক অবৈধ উপায়ে কাড়ি কাড়ি টাকা কামিয়ে বাড়ি গাড়িসহ “আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ” হয়েছেন, তাদের একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা করা হোক।
পাশাপাশি তালিকা তৈরির পর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে থাকা অনৈতিকতা বিষয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে, সেইসব সাংবাদিক নামধারী ধান্ধাবাজ, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর দৃষ্টান্তমূলক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক এবং দুর্নীতিবাজ সেইসব সাংবাদিকদের নামের তালিকাটিও জনসম্মুখে ছবিসহ প্রকাশ করা হোক।
যা দেখে ভবিষ্যতে ‘রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ’ খেতাব পাওয়া অত্যন্ত সম্মানজনক এই মহান পেশার অধিকারী জাতির বিবেক খ্যাত সাংবাদিকেরা কখনও আর অবৈধ পথে কাড়ি কাড়ি টাকা কামিয়ে এতটা ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত’ হবেন না।
আর যদি সুষ্ঠু তদন্তে মুন্নি সাহা, ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ সহ যে কারও বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া না যায়, তাহলে তাদের সবাইকে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে এসব গতবাধা মুখস্ত অভিযোগ থেকে দ্রুত অব্যাহতি দেওয়া হোক।
যাতে আমরা সাধারণ সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে অব্যাহতি পাওয়া সেইসব সাংবাদিক ভাই-বোনদেরকে ঘটা করে জনসম্মুখে ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ প্রদান করতে পারি।
ঈশ্বর সবার মঙ্গল করুন। অপ সাংবাদিকতা দূর হোক, সুসাংবাদিকতার জয় হোক।।
লেখক: গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, গণমাধ্যমকর্মী।