সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের গেটে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স। হাঁকডাক দিয়ে তুলে নিচ্ছেন রোগী, বাগিয়ে নেয়া হচ্ছে উচ্চ ভাড়া।
সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকায় বিকল্প খোঁজার উপায় নেই। বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা অন্য কোনো যানবাহন ব্যবহার করতে চাইলে তাতেও বাধা দেয় সিন্ডিকেট। নেই দরদাম করারও সুযোগ। কারণ রোগী সঙ্গে নিয়ে তো সময় নষ্ট করা যায় না।
মো. সুমন নামে এক ভুক্তভোগী জানালেন তার অভিজ্ঞতা। চট্টগ্রাম থেকে আসা অসুস্থ বাবাকে প্রথমে নিউরোসায়েন্স, পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। শুধু অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াই গুনতে হয়েছে ১৮ হাজার টাকা।
এই ভুক্তভোগী সময় সংবাদকে বলেন, ‘হাসপাতালে যে খরচ হয়েছে, এর চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া অ্যাম্বুলেন্সকে দিতে হয়েছে। যে যা চাইছে, বাধ্য হয়েই দিতে হচ্ছে।’
সুমন মিয়ার মতো প্রতিদিনই এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন অনেকে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, রোগীর কী অবস্থা, সেটা তাদের দেখার বিষয় না! তাদের শুধু টাকা দরকার। বাহির থেকে অ্যাম্বুলেন্স আনতে চাইলেও তারা আনতে দেন না।
এ-তো গেলো বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের কথা, সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের কী হাল? খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ২ হাজার ৮০০ শয্যার দেশের বৃহত্তম সরকারি হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেলে অ্যাম্বুলেন্স আছে মাত্র ৮টি। তার মধ্যেও অকেজো পড়ে আছে কয়েকটি। একই চিত্র সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল ও মিটফোর্ডের। সোহরাওয়ার্দীর অ্যাম্বুলেন্স সক্রিয় আছে ৫টি আর মিটফোর্ডে দুটি।
সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের স্বল্পতার কারণ ও এমন অবস্থার উন্নতি কেন হচ্ছে না এমন প্রশ্নে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শয্যা, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও কর্মচারী সংকট নিরসন করতে গিয়েই হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনের। তাই অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টি কম গুরুত্ব পাচ্ছে।
ঢামেকের পরিচালক বলেন, ওটি কম আছে, সেটা বাড়ানো দরকার; আইসিইউ কম আছে, ওইটা বাড়ানো দরকার। এ রকম বেশি জরুরিগুলোতে আমরা ফোকাস করছি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ব্যবহৃত অ্যাম্বুলেন্সগুলোর মান যাচ্ছেতাই। অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিশ্চিতে আলাদা রেগুলেটরি বোর্ড করার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর রশিদ ই মাহবুব।
এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ফাস্ট এইডে অভ্যস্ত ট্রেইনড ড্রাইভার এবং অ্যাটেন্ডেন্স থাকতে হবে, যারা অন্তত কিছু হেলথ কেয়ার জানেন। মেডিকেল অ্যাটেন্ডেন্স বা ম্যানপাওয়ার এটার সঙ্গে জড়িত কিন্তু এটা হেলথ সার্ভিসের আওতায় থাকতে হবে, তা নয়। এটা কিন্তু অন্য যেকোনো সার্ভিসের সঙ্গে যেতে পারে, যদি তা যথাযথভাবে মেইনটেইন করা হয়।’