• বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ১১:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম
রাজশাহীত টিসিবির পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ভোক্তারা কিশোরগঞ্জে ফাজিল মাদ্রাসায় ভুয়া কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ সাভারে ৯৪ বোতল ফেনসিডিল সহ দুই মাদক কারবারি গ্রেফতার মিরপুর সাংবাদিক কল্যাণ সমবায় সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি জহিরুল ইসলাম-সম্পাদক মারুক হায়দার দেশজুড়ে অবৈধ আবাসন প্রকল্পের ছড়াছড়ি বিতর্কিত ঢাকা বোট ক্লাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্ছেদ অভিযান সাংবাদিককে হুমকি, অফিসে দাপট ; দুলালের খুঁটির জোর কোথায়? সাভারে ৪০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার কিশোরগঞ্জে খাস সম্পত্তির উপর দিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধের অভিযোগ! ছাত্র-জনতার ওপর গুলির নির্দেশদাতা ৩৯ ম্যাজিস্ট্রেট বহাল তবিয়তে

২০২৪ সালে ফ্যাসিবাদ পতন আন্দোলনে ছাত্র জনতার মুখে রক্তগরম করা বিপ্লবী শ্লোগান গুলো

অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন:
Update : শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন:

এ দেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে মানুষকে উজ্জীবিত করেছে নানা বিপ্লবী শ্লোগান। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন,১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৬৯ সালের আইয়ুব – মোনায়েম বিরোধী গণঅভ্যুত্থান,১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান এবং বিশেষ করে ২০২৪ সালের ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে প্রতিবাদী মানুষের কন্ঠে বারুদ হয়ে জ্বলে উঠেছিলো কিছু শ্লোগান। এ শ্লোগানগুলো শুনে সাধারণ মানুষের শিরা উপশিরায় লাল রক্তগুলো টগবগ করে ফুঁসে উঠেছিল।

১৯৬৮ – ১৯৬৯ সালে ছাত্র সমাজের ১১ দফা আন্দোলনে শ্লোগান উঠেছিল তুমি কে,আমি কে, বাঙালি, বাঙালি। তোমার দেশ, আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ। পুলিশ তুমি যতই মারো,বেতন তোমার একশ বারো।
১৯৭১ সালের আলোচিত সেই শ্লোগানগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলো, বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর। পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকার পতনের আন্দোলনের প্রধান শ্লোগান ছিলো গণতন্ত্র মুক্তি পাক,স্বৈরাচার নিপাত যাক। এক দফা এক দাবি, এরশাদ তুই কবে যাবি। এই মুহূর্তে দরকার, তত্বাবধায়ক সরকার।
২০২৪ সালের জুলাই – আগস্টের ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় তরুণদের তাৎক্ষণিক আবিষ্কার করা একেকটা বিপ্লবী শ্লোগান বারুদ হয়ে জ্বলে উঠে। ২৪ এর শ্লোগান গুলোর মধ্যে ছিলো —
১. তুমি কে,আমি কে?রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার:
বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জুলাইয়ের শুরুতে কোটা আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। ১৪ জুলাই আন্দোলনকারীদের নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না, ‘তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?’
তার এমন মন্তব্যের পর সেই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা উত্তাল হয় শিক্ষার্থীদের অভিনব এক স্লোগানে। ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার, রাজাকার। কে বলেছে কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।’ চাইলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার। এই স্লোগানের পর থেকেই মূলত আন্দোলন গতি পায়, মোড় নেয় ভিন্ন দিকে।
২. বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর:
১৪ জুলাই দিনগত রাতে শিক্ষার্থীদের রাজাকার রাজাকার স্লোগানের পর তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নড়েচড়ে বসে। তাদের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ছাত্রলীগ ও পুলিশ মিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও অত্যাচার করে। ১৬ জুলাই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনে রংপুরের আবু সাঈদসহ শহীদ হন অন্তত ছয়জন। আবু সাঈদের মৃত্যু নাড়িয়ে দেয় গোটা দেশের মানুষকে। পুলিশের গুলির সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদ যেভাবে নিজের বুক চিতিয়ে দেন, তা উস্কে দেয় দ্রোহের আগুন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের মিছিলের অন্যতম প্রধান স্লোগান ছিল— ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।’
৩. নাটক কম করো পিও: আবু সাঈদের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি ঘোলাটে হলে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। তার সেই ভাষণে শহীদদের প্রতি কোনো সমেবেদনা ছিল না। বরং ১৬ জুলাই নিহত হওয়া তথাকথিত ছাত্রলীগের এক কর্মীর জন্য শেখ হাসিনার কান্না দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে মানুষ লেখে ‘নাটক কম করো পিও।’
পরবর্তীতে মেট্টোরেল স্টেশন ও বিটিভি ভবন পরিদর্শনে গিয়ে শেখ হাসিনার মায়াকান্না দেখে বেড়ে যায় নাটক কম করো পিও বাক্যের প্রয়োগ।
৪.ইন্টারনেট বন্ধ করি নাই, একা একা বন্ধ হয়ে গেছে:
জুলাইয়ে আন্দোলন যখন ক্রমে বাড়তে থাকে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে লিখতে শুরু করে, তখন দেশব্যাপী বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট সংযোগ। তবে, আওয়ামী লীগ সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক দাবি করেন, সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করেনি। আন্দোলনকারীরা ডেটা সেন্টার পুড়িয়ে দেওয়ায় আপনাআপনি বন্ধ হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা ইন্টারনেট বন্ধ করিনাই, একা একা বন্ধ হয়ে গেছে।’
৫. জন্মভূমি অথবা মৃত্যু:কিউবা বিপ্লবের সময় চে গুভেরা জাতিসংঘে একটি ভাষণে বলেছিলেন, ‘জন্মভূমি অথবা মৃত্যু।’ বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবেও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে স্লোগানটি। বিপ্লবের মহাপুরুষ গুভেরার স্লোগানটি ছড়িয়ে যায় ছাত্র-জনতার মুখে মুখে। সামজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে রাজপথ সবখানে উচ্চারিত হয়, জন্মভূমি অথবা মৃত্যু।
৬. পানি লাগবে পানি:আবু সাঈদের মৃত্যুর পর উত্তাল ছাত্র-জনতা রাজপথেই নিজেদের ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলে যেন। খুনি হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে রাজপথে নেমে আসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা পর্যন্ত নেমে আসে রাজপথে। আন্দোলনে ক্লান্ত শিক্ষার্থীদের পানি বিতরণ করছিলেন মীর মুগ্ধ। রাজধানীর উত্তরার রাস্তায় পানি হাতে তার চেঁচিয়ে বলা—পানি লাগবে পানি? কথাটি শক্তি জোগায় আন্দোলনে। ১৮ জুলাইয়ের দিনটিতে পানি বিতরণের মাঝেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শহীদ মুগ্ধ।
৭.আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না: আন্দোলন-সংগ্রামের সময়টাতে ছাত্রলীগ ও পুলিশের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছে অসংখ্য মানুষ। যার কারণে, এটি হয়ে ওঠে গণমুক্তির লড়াই। গোটা দেশের রাজপথ প্রতিনিয়ত মুখর হয়েছিল, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’ স্লোগানে।
৮. সামনে পুলিশ পেছনে স্বাধীনতা:জুলাই- আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের এক পর্যায়ে স্বৈরাচারী সরকারের পেটোয়া বাহিনী যখন রাজপথে পাখির মতো গুলি করে শত শত মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করছে তখন একটি মেয়ে আঙুল উচিয়ে বজ্রকন্ঠে বলে উঠেন, “সামনে পুলিশ, পেছনে স্বাধীনতা।” তার এই কথা মানুষকে রাজপথে নেমে আসতে দারুণভাবে প্রেরণা যুগিয়ে ছিল।
৯.শেখ হাসিনা পালায় না: ১৬ থেকে ১৮ জুলাই বেগবান হতে থাকা আন্দোলনের সময় চাউর হয়, দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। অবস্থান নিয়েছেন ভারতে। পরদিনই অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে দম্ভের সঙ্গে হাসিনা বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালায় না।’
১০. বিকল্প কে? আমি, তুমি, আমরা: শেখ হাসিনার বিকল্প বাংলাদেশে নেই, গত ১৬ বছরে অসংখ্যবার এই কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে সত্যিকার অর্থে বিকল্প নিয়ে ভাবনা তৈরি হয়। কে ধরবেন দেশের হাল, এমন প্রশ্নে তখন ছাত্র-জনতার স্লোগান ছিল—বিকল্প কে? আমি, তুমি,আমরা।
১১.অন্যান্য শ্লোগান: আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম। দালালী না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ। আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই।একাওরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক বারবার। যে হাত গুলি করে, সে হাত ভেঙে দাও। অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক অ্যাকশন। দিয়েছিতো রক্ত, আরও দেব রক্ত।
এসব শ্লোগানগুলো স্বৈরাচার সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করেছিলো।
অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন
সাধারণ সম্পাদক
কাপাসিয়া প্রেসক্লাব


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মূখপত্র।। NBB

Acting Editor: Neamul Hassan Neaz

Mofussal Editor: Kamrul Hasan Rony

Office: +8809611584881, 01320950171

E-mail: newsnbb365@gmail.com

Translate »