সাংবাদিক মিলনমেলা উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল মিটিং হয়ে উঠে সহমর্মিতার সেতুবন্ধন। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনকারী সংবাদকর্মীদের সুখ, অবজ্ঞা, বঞ্চনার অপ্রকাশিত কষ্ট-কান্না বিনিময়ের অন্যরকম আসর হয়ে উঠে মিটিংটি। সবার খোলামেলা আলোচনা, বিদ্যমান সমস্যা তুলে ধরা, সমাধানের পথ বাৎলে দেওয়া ছাড়াও দলবাজির অভিশাপ মুক্ত সাংবাদিকতার পুনর্জাগরণে সুপারিশ তুলে ধরেন আলোচকরা। নির্ধারিত এক ঘণ্টার মিটিংটা আবেগ আপ্লুত, উচ্ছাস, আনন্দে আড়াই ঘণ্টা পেরিয়ে যায়, তবু যেন তা শেষ হওয়ার নয়!

পদ্মায় সাংবাদিক মিলনমেলা আয়োজক কমিটির উদ্যোগে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া ভার্চুয়াল মিটিংটি রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে শেষ হয়।

ভার্চুয়াল এ মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক দেশবাংলা সম্পাদক, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার আইকন খ্যাত সাঈদুর রহমান রিমন। সঞ্চালনায় ছিলেন দৈনিক নয়াদিগন্ত’র সাংবাদিক এমএ আকরাম।

আগামী ১৮ ও ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য মিলনমেলায় সাংবাদিকদের নতুন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা নিয়ে সাঈদুর রহমান রিমনের সূচনা বক্তব্য দিয়েই শুরু হয় ভার্চুয়াল মিটিং। এরপরই সাংবাদিক এবং সাংবাদিকতা নিয়ে আবেগঘন বক্তব্য দেন কক্সবাজারের দৈনিক রূপালী সৈকত সম্পাদক ফজলুল কাদের চৌধুরী। যিনি সুদীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে মাঠের সাংবাদিকতায় নিবেদিত। ছিলেন যুগান্তর ও কালেরকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার। দায়িত্ব পালন করছেন কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবেও।

এরপর দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খ্যাতিমান সাংবাদিকরা একে একে বক্তব্য দিতে থাকেন। তারা সাংবাদিকতায় বিদ্যমান অসঙ্গতি, অবজ্ঞা-অবহেলা, ধারাবাহিক নিপীড়ন, নির্যাতন ও মামলা হয়রানির বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তোলেন নিজ নিজ বক্তব্যে। এতে মুহূর্তেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মিটিংয়ে অংশ নেওয়া সাংবাদিকরা।

আলোচকদের তুলে ধরা কষ্ট-কান্না, যন্ত্রণাদগ্ধ জীবনের সঙ্গে বেশিরভাগ সাংবাদিকের জীবনযাত্রার অভিন্ন প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। পাশাপাশি সাংবাদিকদের সুরক্ষা এবং নিপীড়ন, নির্যাতন, মামলা-হয়রানির বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা নিতে পেশাদার সাংবাদিকদের সমন্বয়ে ব্যতিক্রম একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার দাবিসহ নানা পরামর্শ দেন বক্তারা।

প্রতিটি কর্মসূচির ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিষয়টি সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়ারও সুপারিশ করা হয়। বলা হয়, নতুন এ প্ল্যাটফর্মটি শুধুমাত্র তার সদস্যদের মধ্যেই সহায়তা সেবা প্রদানের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখবে না, দেশের সব সাংবাদিকের জন্যই তা উন্মুক্ত রাখতে হবে।

পিন পতন নীরবতায় একে একে কষ্টগাঁথা, অশ্রুসিক্ত বাস্তবতার বিবরণ তুলে বক্তৃতা দেন ভোলার এনটিভি’র স্টাফ রিপোর্টার আফজাল খান, চট্টগ্রামের সোহাগ আরেফিন, বরিশালের দুটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক কাজী মিরাজ, দিনাজপুরের চ্যানেল আই’র স্টাফ রিপোর্টার শাহ আলম শাহী, লন্ডন পত্রিকার ঢাকা প্রতিনিধি রিমি সর্দার কবিতা, বৈশাখী টিভির রাঙামাটি প্রতিনিধি কামাল হোসেন, চট্টগ্রামের সাংবাদিক কিরণ শর্মা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরের প্রতিদিনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, পিরোজপুরের সাংবাদিক নেতা সোহেল সর্দার, ঝিনাইদহের একুশে টিভি ও জনকন্ঠ প্রতিনিধি এম রায়হান, খাগড়াছড়ি থেকে দৈনিক কালের প্রতিচ্ছবির সম্পাদক হাসান আল মামুন, পাবনার মাইটিভি প্রতিনিধি প্রভাষক গিয়াসউদ্দিন, ঝালকাঠির সাংবাদিক নেতা প্রভাষক রেজাউল ইসলাম বাচ্চু, বাসস’র গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি হায়দার হোসাইন, বাগেরহাটের আরটিভি’র জেলা প্রতিনিধি সামছুর রহমান, বান্দরবানের জনকন্ঠ প্রতিনিধি আব্দুর রহিম, চাঁপাই নবাবগঞ্জের চ্যানেল এস প্রতিনিধি আলমগীর হোসেন, বরিশালের সাংবাদিক-সংগঠক, দেশবাংলার ব্যুরো চিফ মামুনুর রশিদ নোমানী, সরেজমিন বার্তার সিনিয়র রিপোর্টার শারমিন সুলতানা মিতু।

মিটিংয়ে সঞ্চালক, বক্তা, শ্রোতাদের মধ্যে গড়ে ওঠা চমৎকার মেলবন্ধনে সময়সীমার সব গণ্ডি পেরিয়ে যায়, তবু চলতে থাকে আলোচনা। একপর্যায়ে আয়োজক কমিটির পক্ষে সদস্য সচিব এমএ আকরাম দুদিনব্যাপী মিলনমেলার নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

মিলনমেলায় সাংবাদিকদের হাসি-কান্নার বাস্তব চিত্র তুলে ধরা, সাংবাদিকতায় বিদ্যমান সমস্যাদি নিরসনে ভুক্তভোগীদের পরামর্শ ও প্রস্তাব গ্রহণ, নির্যাতনবিরোধী অ্যাকশন টিম গঠন, উচ্চ আদালতে সিনিয়র আইনজীবীদের নিয়ে আইনি সহায়তামূলক প্যানেল গঠন, সাংবাদিকদের মর্যাদা বৃদ্ধিকল্পে বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ, আর্থিক সহায়তামূলক আপদকালীন তহবিল গঠনসহ বিকল্প গণমাধ্যম গঠন সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির প্রস্তাব উত্থাপিত হবে।

থাকবে আনন্দ-বিনোদন, নৌ ভ্রমণ, নদী স্নান, বারবিকিউ, রাতে চলবে বাউল গানের উপভোগ্য আসর।

মিলনমেলায় এ পর্যন্ত সারাদেশের তিন শতাধিক সাংবাদিক অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্রতিদিনই এ সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পল্লব।