অনুসন্ধানী প্রতিবেদকঃ
জাল জালিয়াতি করে গ্রাহক প্রতারণা সহ নানান অভিযোগ নিয়ে বহাল তবিয়তে চট্টগ্রামের “সংশপ্তক” এনজিও সংস্থা। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি অনিয়মসহ স্বজনপ্রীতি করার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ২০০০ সালের ৩০ জুন নিবন্ধিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দেশি বিদেশি সংস্থা থেকে প্রকল্প ভাগিয়ে নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবারের লোকজনদের নিয়ে কার্য পরিচালনা করে আসছে সংস্থাটি অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও অনুমোদন না পাওয়া সত্বেও বেস কিছু বছর ক্ষুদ্র ঋণ নাম প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছিলো। এই প্রকল্পে গ্রামের সহজ সরল মানুষদের ভুল বুঝিয়ে অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে শত শত পরিবার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রামের সাধারণ মানুষদের প্রদানকৃত অর্থের দ্বিগুণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নেয়ার পরেই শুরু হতো প্রতারণা।
এনজিওটি বেধে দেয়া (৭ বছর) সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও গ্রাহকের টাকা পরিশোধ না করায় গত ২৪/০৬/২০২৪ ইং তারিখ ১০০০০০০/- দশ লক্ষ টাকা দাবী করে চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রবাসী হারুনুর রশীদ বাদী হয়ে সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে দন্ডবিধি ৪২০,৪০৬,৫০৬ ধারায় মামলা করেন। সিআর মামলা নং ১৫১২/ ২০২৪ কোতোয়ালী।
সংশপ্তক সংস্থার নিজস্ব কোন ভাবন কিংবা অফিস না থাকায় প্রতারণা করে বার বার পার পেয়ে যাচ্ছে। যেই এলাকায় অতিরিক্ত প্রতারণা করে সেই এলাকায় বেশিদিন স্থায়িত্ব হয়না বলেও জানান অনেকে।
এদিকে মামলা হওয়ার পর সংস্থার কর্মকর্তা ও কার্মচারী অফিসে কম আসাযাওয়া করেন। আসলেও আত্মগোপনে চলে যান রাতের আধাঁরে। আবার কেউ কেউ এসে অফিস থেকে কাগজ পত্র নিয়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানান।
আদালতে দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারা উপজেলার বোয়ালিয়া এলাকার মৃত আয়ুব আলীর পুত্র প্রবাসী মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ (৪৮)কে গত ২০১৭ সালের ২০ জুন সংশপ্তক এনজিও সংস্থার প্রধান নির্বাহী ও কো-অডিনেটর লিটন চৌধুরী এবং কো-অডিনেটর উৎপল বড়ুয়া তাদের সংস্থায় টাকা রাখার প্রস্তাব দেন। তদের কথা সরল মনে বিশ্বাস করে তিনি টাকা রাখতে চান। তাদের কথা বিশ্বাস করে ৫ লাখ টাকা জমা করেন প্রবাসী। ৭ বছরে টাকার দ্বিগুন দেবে বলে স্ট্যাম্পে চুক্তি করেন। ওই চুক্তিনামা ও ‘সংশপ্তক’র নামে প্রধান নির্বাহী ও কো- অডিনেটর লিটন চৌধুরী এবং কো-অডিনেটর উৎপল বড়ুয়া যৌথ স্বাক্ষরিত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের আনোয়ারা শাখার ১০ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চুক্তিমোতাবেক গত ২০ জুন ২০২৪ তারিখে ৭ বছর মেয়াদ শেষ হয়। মেয়াদ শেষে ১০ লাখ টাকার চেক ব্যাংকে জমা দিলে ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, উক্ত একাউন্টে টাকা নাই। পরে অফিসে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে কোন সৎউত্তর না পেয়ে আলোচনা করে চেকটি ডিজওনার করেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছেন এটা বুঝতে পেরে দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আদালতে মামলা দয়ের করেন।
অনুসন্ধানে জানাযায়, ক্ষুদ্র ঋনের কোন বৈধতা না থাকা সত্ত্বেও সংশপ্তক নামক এনজিও প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে উক্ত প্রকল্পে টাকা জমা রেখে ৭ বছর পর দ্বিগুন টাকা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করেন। কিছুদিন পর পর তারা অফিস ও বাসা পরিবর্তন করে থাকে। লালখানবাজার, সদরঘাট হয়ে এখন অফিস করেছে ফিরিঙ্গিবাজারে। যে কোন মূহূতে অফিস ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে পারে বলে একটি সুত্র জানাযায়।
আরও জানা গেছে, গ্রাহকের সঞ্চিত টাকা দিয়ে লিটন চৌধুরী ও উৎপল বড়ুয়া চট্টগ্রামের আনোয়ারা পারকী সমুদ্র সৈকত, আনোয়ারা সদর ও বোয়ালখালীতে জমি কিনেছে বলে বিশ্বাস্ত সুত্রে জানাযায়।
একটি সুত্রবলছে, গ্রাহকের টাকা মেরে লিটনের ভারতে চিকিৎসার নামে যাতায়াত দিন দিন বেড়েই চলেছে, আসাযাওয়ার মাঝি দেশ থেকে বহু টাকা পাচার করছে জানান।
গ্রাহক হয়রানি ও মামলার বিষয় প্রধান নির্বাহী লিটন চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে: তিনি উক্ত বিষয় কোন সৎউত্তর না দিয়ে প্রতিনিধিকে হুমকি দামকি দেয়া সহ মামলা করার কথা বলেন।
মামলার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মনিরুল ইসলাম জানান, তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তদন্ত চলোমান আছে, যেটা সত্যি সেটাই আমি কোটে দাখিল করবো।
সংশপ্তক এনজিওর গ্রাহক হয়রানির বিষয় প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত এনজিও বিষয়ক ব্যুরো উপপরিচালক (সা:) উপ সচিব মোঃ মনির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, সংশপ্তক এনজিওর গ্রাহক হয়রানির বিষয় আমাদের কাছে এখনো কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আস্বস্ত করেন।
এধরণের হয়রানি কিংবা প্রতারণার অভিযোগ পেলে প্রকল্পের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব পরবে কিনা! জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে রিকমন্ডেড একটি বিষয় আছে, সেখানে অভিযোগ হলে নিশ্চয়ই প্রকল্প পেতে বেগ পোহাতে হবে। বর্তমান চলোমান প্রকল্পের পূর্ণ তদন্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানান তিনি।
বিভিন্ন প্রকল্পের দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে থাকছে আগামী পর্ব . .