• শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
রাজশাহীত টিসিবির পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ভোক্তারা কিশোরগঞ্জে ফাজিল মাদ্রাসায় ভুয়া কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ সাভারে ৯৪ বোতল ফেনসিডিল সহ দুই মাদক কারবারি গ্রেফতার মিরপুর সাংবাদিক কল্যাণ সমবায় সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি জহিরুল ইসলাম-সম্পাদক মারুক হায়দার দেশজুড়ে অবৈধ আবাসন প্রকল্পের ছড়াছড়ি বিতর্কিত ঢাকা বোট ক্লাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্ছেদ অভিযান সাংবাদিককে হুমকি, অফিসে দাপট ; দুলালের খুঁটির জোর কোথায়? সাভারে ৪০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার কিশোরগঞ্জে খাস সম্পত্তির উপর দিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধের অভিযোগ! ছাত্র-জনতার ওপর গুলির নির্দেশদাতা ৩৯ ম্যাজিস্ট্রেট বহাল তবিয়তে

কখনও ভেবে দেখেছেন, আফ্রিকার সীমানাগুলো এত অদ্ভুত কেন?

অনলাইন ডেস্ক
Update : রবিবার, ৯ মার্চ, ২০২৫

এখানকার দেশগুলোর বর্ডার বা সীমান্তগুলো প্রাকৃতিক ভূপ্রকৃতি বা ঐতিহাসিক সীমানা অনুসরণের পরিবর্তে দীর্ঘ সরল রেখা কিংবা অসমানভাবে আঁকাবাঁকা–যা অনেক ক্ষেত্রে পাহাড়, নদী এবং কমিউনিটির ভেতর দিয়ে গিয়েছে।

আফ্রিকায় ৫৪টি দেশ রয়েছে, যা বিশ্বের যেকোনো মহাদেশের তুলনায় সর্বোচ্চ। এখানকার দেশগুলোর বর্ডার বা সীমান্তগুলো প্রাকৃতিক ভূপ্রকৃতি বা ঐতিহাসিক সীমানা অনুসরণের পরিবর্তে দীর্ঘ সরল রেখা কিংবা অসমানভাবে আঁকাবাঁকা–যা অনেক ক্ষেত্রে পাহাড়, নদী এবং সম্প্রদায়ের ভেতর দিয়ে গিয়েছে।

এর মূল কারণ হলো ১৮৮৪-৮৫ সালের বার্লিন সম্মেলন। ইউরোপীয় শক্তিগুলো এই বৈঠকে আফ্রিকার কোনো দেশের অংশগ্রহণ ছাড়াই নিজেদের মধ্যে পুরো মহাদেশের সীমানা ভাগ করে নেয়।

এই বিশ্লেষণে আফ্রিকার কিছু অস্বাভাবিক সীমান্তের পেছনের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে।

মিসর ও সুদানের বিরোধ

আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব কোণে রয়েছে ২,০০০ বর্গকিলোমিটারের এক নির্জন, শুষ্ক ভূখণ্ড ‘বির তাওইল’, যা মিসর ও সুদান কেউই নিজেদের বলে দাবি করে না।

১৮৯৯ সালে ব্রিটিশ শাসকরা ২২ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ বরাবর সোজা একটি সীমারেখা নির্ধারণ করেছিল, যা তৎকালীন ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত মিসর ও সুদানের সীমানা হিসেবে চিহ্নিত ছিল। তবে, ১৯০২ সালে ব্রিটেন প্রশাসনিক কারণে উপকূলীয় ও সম্পদসমৃদ্ধ ‘হালাইব ট্রায়াঙ্গাল’ সুদানকে এবং ‘বির তাওইল’ মিসরকে দিয়ে দেয়।

এর কয়েক দশক পরে স্বাধীনতা লাভের পর মিসর ১৮৯৯ সালের সীমারেখাকে গ্রহণযোগ্য বলে দাবি করে, আর অন্যদিকে সুদান ১৯০২ সালের সীমানাকে প্রকৃত সীমারেখা দাবি করে।

কিন্তু বির তাওইল দাবি করলে যে দেশ তা নেবে, তাকে হালাইব ট্রায়াঙ্গালের অধিকার ছাড়তে হবে। ফলে কেউই বির তাওইল নিজেদের বলে দাবি করে না।

২০০০ সাল থেকে মিসর হালাইব ট্রায়াঙ্গালের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে, তবে এই বিরোধের এখনো কোনো সমাধান হয়নি।

ছবি: আল জাজিরা

গাম্বিয়ার সীমানা কেন এত সরু?

আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল বরাবর গাম্বিয়া নদীর দুই পাশে প্রায় সম্পূর্ণভাবে সেনেগাল-বেষ্টিত সরু ভূখণ্ডটি হলো এই মহাদেশের ক্ষুদ্রতম দেশ গাম্বিয়া। এখানে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের বাসবাস।

১৫ শতকে পর্তুগিজ নাবিকেরা গাম্বিয়ায় আসার পর এটি দাসব্যবসার প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে, ১৮২১ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয় এবং ১৯৬৫ সালে স্বাধীনতা লাভ করে।

গাম্বিয়ার প্রতিবেশী দেশ ছিল ফরাসি উপনিবেশের অধীনে থাকা সেনেগাল। ফলে উভয় দেশের মধ্যে সীমান্ত নির্ধারণ ছিল দীর্ঘদিনের বিতর্কের বিষয়।

১৮৮৯ সালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স গাম্বিয়ার সীমান্ত নির্ধারণ করে, যেখানে ব্রিটিশ শাসিত ভূখণ্ড গাম্বিয়া নদীর দুই পাশে প্রায় ১৬ কিলোমিটার (১০ মাইল) বিস্তৃত হয়।

প্রচলিত আছে যে, ব্রিটিশ সেনারা নৌকা থেকে কামানের গোলা ছুড়ে গাম্বিয়ার প্রস্থ নির্ধারণ করেছিল, যাতে তারা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। যদিও এর ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই, তবে ১৮৯১ সালে এক ব্রিটিশ-ফরাসি কমিশন সীমান্ত নির্ধারণের চেষ্টা করলে স্থানীয় শাসকদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে।

গাম্বিয়ার সীমানা মূলত ঔপনিবেশিক স্বার্থ ও ব্রিটিশ সামরিক শক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছিল, যার ফলে এটি সেনেগালের মধ্যে একটি সরু ভূখণ্ড হিসেবে থেকে যায়।

ছবি: আল জাজিরা

কাবিন্দা কেন অ্যাঙ্গোলার অংশ?

আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে, অ্যাঙ্গোলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি ছোট অংশ হলো কাবিন্দা প্রদেশ। এটি গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের একটি সরু ভূখণ্ড দ্বারা অ্যাঙ্গোলা থেকে পৃথক হয়েছে।

পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক সময় থেকেই কাবিন্দা অ্যাঙ্গোলার অংশ ছিল।

১৮৮৪-৮৫ সালের বার্লিন সম্মেলনে কাবিন্দাকে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্তুগিজ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কাবিন্দার সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক স্বতন্ত্রতা থাকলেও এটি প্রশাসনিকভাবে অ্যাঙ্গোলার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

১৯৭৫ সালে পর্তুগাল আফ্রিকা থেকে চলে যাওয়ার সময় কাবিন্দার প্রতিনিধিত্ব ছাড়াই অ্যাঙ্গোলার স্বাধীনতাকামী দলগুলোর সঙ্গে আলভর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে কাবিন্দার সমুদ্র তেলসম্পদের কারণে একে অ্যাঙ্গোলার অংশ ঘোষণা করা হয়।

ছবি: আল জাজিরা

নামিবিয়ার কেন সরু ভূখণ্ড রয়েছে?

দক্ষিণ আফ্রিকার মানচিত্রে নামিবিয়া থেকে একটি সরু ভূখণ্ড বেরিয়ে যেতে দেখা যায়, এটি ক্যাপ্রিভি স্ট্রিপ নামে পরিচিত।

১৯ শতকের শেষভাগে জার্মানি ‘জার্মান সাউথ ওয়েস্ট আফ্রিকা’ (বর্তমান নামিবিয়া) এবং ‘জার্মান ইস্ট আফ্রিকা’ (বর্তমান তানজানিয়া, রুয়ান্ডা ও বুরুন্ডি) নিয়ন্ত্রণ করত, আর ব্রিটেন আশপাশের অঞ্চলগুলো শাসন করত।

জার্মানি জাম্বেজি নদী নিয়ন্ত্রণ করে তার উপনিবেশগুলোর মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যিক সংযোগ গড়ে তুলতে চেয়েছিল, যাতে ভারত মহাসাগরে যাওয়ার পথ সুগম হয়।

১৮৯০ সালে জার্মানি ও ব্রিটেন একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যেখানে জার্মানি জাঞ্জিবারের দাবি ছেড়ে দিয়ে বিনিময়ে হেলিগোল্যান্ড দ্বীপ ও ক্যাপ্রিভি স্ট্রিপের নিয়ন্ত্রণ নেয়, যা জাম্বেজি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।

তবে এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। কারণ ক্যাপ্রিভি স্ট্রিপের ৬৫ কিলোমিটার পূর্বেই রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জলপ্রপাত ‘ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত’, যা নদীপথে বাণিজ্যের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।

লেসোথো কেন পুরোপুরি দক্ষিণ আফ্রিকা বেষ্টিত?

দক্ষিণ আফ্রিকার পাহাড়ঘেরা ছোট ভূখণ্ড লেসোথো পুরোপুরি দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বারা বেষ্টিত।

১৯ শতকে বাসোথো জনগোষ্ঠীর রাজা মোশোশো প্রথম-এর নেতৃত্বে পার্বত্য অঞ্চলে তাদের শক্ত ঘাঁটি গড়ে ওঠে। পর্বতমালা তাদের জন্য প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করত, যা জুলু ও বুর (ডাচ কৃষক) দখলকারীদের আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিত।

বুর সম্প্রসারণ ঠেকাতে মোশোশো ১৮৬৮ সালে ব্রিটিশ সহায়তা চাইলে বাসুতোল্যান্ড ব্রিটিশ শাসনে চলে যায়।

১৯৬৬ সালে এটি স্বাধীন হয়ে লেসোথো নামে আত্মপ্রকাশ করে।

ছবি: আল জাজিরা

তিন আফ্রিকান দেশের নাম ‘গিনির’ সঙ্গে যুক্ত কেন?

পৃথিবীতে চারটি দেশের নামে ‘গিনি’ রয়েছে, যার মধ্যে তিনটি পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে অবস্থিত। ধারণা করা হয়, পর্তুগিজ ভাষার ‘গিনি’ শব্দটি এই অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা বোঝাতে ব্যবহৃত হতো।

গিনি, যা একসময় ‘ফ্রেঞ্চ গিনি’ নামে পরিচিত ছিল, ১৯৫৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে।

গিনি-বিসাউ পূর্বে ‘পর্তুগিজ গিনি’ নামে পরিচিত ছিল। এটি ১৯৭৪ সালে স্বাধীন হয়। প্রতিবেশী গিনি থেকে আলাদা পরিচিতি দিতে তারা রাজধানীর নাম ‘বিসাউ’ সংযুক্ত করে।

নিরক্ষীয় গিনি আগে ‘স্প্যানিশ গিনি’ নামে পরিচিত ছিল। দেশটি ১৯৬৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে এবং নিরক্ষরেখার কাছাকাছি অবস্থানের কারণে নামের সঙ্গে ‘নিরক্ষীয়’ কথাটি যুক্ত করে।

অন্যদিকে, আফ্রিকার বাইরে অবস্থিত পাপুয়া নিউ গিনির নামকরণ করেন এক স্প্যানিশ অভিযাত্রী। তিনি মনে করেছিলেন, এখানকার আদিবাসীরা পশ্চিম আফ্রিকার গিনির অধিবাসীদের মতো দেখতে।

ছবি: আল জাজিরা

কঙ্গো কেন দুটি?

কঙ্গো নদীর বিপরীত তীরে অবস্থিত দুটি দেশ গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (ডিআর কঙ্গো) ও কঙ্গো প্রজাতন্ত্র। ঔপনিবেশিক শাসনামলে বেলজিয়াম ও ফ্রান্স কঙ্গো নদীর দুই তীরে পৃথক উপনিবেশ স্থাপন করেছিল এবং উভয়কেই ‘কঙ্গো’ নামে অভিহিত করেছিল।

‘কঙ্গো’ নামটির উৎস কঙ্গো রাজ্য, যা একসময় এই অঞ্চলের অন্যতম সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী রাজ্য ছিল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মূখপত্র।। NBB

Acting Editor: Neamul Hassan Neaz

Mofussal Editor: Kamrul Hasan Rony

Office: +8809611584881, 01320950171

E-mail: newsnbb365@gmail.com

Translate »